
মাধ্যমিকের গ্যাঁড়াকলে
– স্যার ডেকেছেন?
– হা বেটা , আয়। তুই রসায়নে ফেল করেছিস দেখছি।
– হু স্যার। মানে ইয়ে আর কি…
– তা বেশ ভালো কোথা। কাল সোকালে পিতাকে লইয়া আসবি, মাতা কে লইয়া আসবি না। মাতারা বড্ড সেন্টিমেন্টাল হয়।
এটা শুনেই তোতনের মনে হল হৃৎপিন্ড টা বুঝি মুখে চলে এল। এর চাইতে স্যার যদি বলতেন, “বেটা তোর মুন্ড টা কেটে দে আমাকে, ফু্টবল খেলবো,” তোতন হাসিমুখে তাই করত। পাশ ফেল টা তো ছাত্র আর শিক্ষকের নিজেদের মধ্যেকার ব্যাপার, এর মাঝে বারবার বাবা কে আনার কি দরকার তোতন বুঝতে পারে না। ফাউল করলেই কি রেফারি প্লেয়ার কে বলে ?– যা তোর কোচ কে ডেকে আন, কানমোলা খাওয়াব!
কেমিস্ট্রি-র ক্লাস টেস্ট টা তে ফেল কেউ আটকাতে পারবে না সেটা তোতন কোয়েসচেন পেপার টা হাতে নিয়েই বুঝেছিল। প্রথম ঘন্টা তে যতটকু পারল লিখল, তারপরেই মাথায় এলো পরশু সন্ধ্যেবেলায় কুমার আর বিমল মিলে সিংহ দমন গাটুলা কে নিয়ে গুহার মধ্যে ঢুকেছিল, আর কালকে মা পরীক্ষার জন্য দেখতে দেয়েনি পরের এপিসোড টা। আধ ঘন্টা বাদেই রিপিট টেলিকাস্ট টা শুরু হবে। শাহ্রুখ বলেছে “হামেশা আপনি দিল কি সুনো”। অর্থাৎ এই দুরুহ প্রশ্নপত্রের মায়া ত্যাগ করাই ভাল। তার চেয়ে এখন বাড়ি ফিরে বিমলের অবস্থা টা যাচাই করা দরকার। এবং তোতন ঠিক তাই করল।
মুস্কিল টা হল তোতনের বাবা শাহ্রুখ কে পছন্দ করেন না, তাই স্বভাবতই দুজনের মতাদর্শের ফারাক বিস্তর। তাই হেডস্যারের কাছ থেকে ফেরার পরে উনি তোতনের পিঠে দুটো স্কেল ভাঙলেন এবং টিভি দেখা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দিলেন। মন্দের মধ্যে ভাল খবর একটাই, ওই এপিসোড টাই ‘আবার যখের ধন’ এর লাস্ট এপিসোড ছিল!
সুখ স্বপনে, শান্তি শ্মশানে।
ঠাকুমার ঘরে এই দুটো কথা লেখা থাকতে দেখেছে তোতন। এখন মাধ্যামিকের আগেই এই কথা গুলোর গুঢ় অর্থ বুঝতে পারছে। তার ওপর সিট টাও নাকি পরতে চলেছে বাঁশতলাঘাট হাইস্কুলে। পাশেই মহাশ্মশান! মাধ্যমিকের আবহাওয়াটাই কেমন যেন আলাদা হয় অন্য গুলোর থেকে। শীতের শেষ, ফ্যানের নতুন হাওয়া জাস্ট শুরু। সবমিলিয়ে একটা থ্রিলিং ব্যাপার।
আরেকটা জিনিস ভাল করে বুঝছে তোতন। ওর কতো গুলো মাধ্যমিক পাস কাকা, জ্যাঠা, মামা, মাসি তুতো ভাইবোন আছে সবমিলিয়ে আর তারা কে কতোগুলো লেটার পেয়েছিল। নিজেকে এখন বিদ্যাসাগরের বংশে জন্মানো এঁড়ে বাছুর বলে মনে হচ্ছে। লেটার পাওয়া অনেক দুরের ব্যাপার, এখন ঠিক ঠাক পাস করতে পারলে একবার গঙ্গার ধারে গিয়ে উলঙ্গ হয়ে নেচে আসবে। একটাই ভরসা, সজারু বলেছে সলিড সাজেশান জোগার করে দেবে।
সজারুর নাম যে কেন সজারু সেটা নিয়ে একটা কুড়ি নম্বরের বড় প্রশ্ন লেখা যা। যেটা এখানে আলোচ্য সেটা হল সজারুর সাথে সাজেশানের সম্পর্ক। পেঁয়াজ আর আদাকুচি ছাড়া যেমন ভাল ডিমের অমলেট হয় না, তেমনি সজারু ছাড়াও নাকি সাজেশান ভাবা যায় না, অন্তত ও নিজে তাই দাবী করে। স্কুলে কিছু ছেলে থাকে যাদের শুধু বিশেষ বিশেষ সময়তেই মনে পরে। যেমন গান গাইবার হলে অভিজ্যোতিকে, বড় ম্যাচ থাকলে দেবজিত কে, ভারী টেবিল সরানোর হলে ভিমু কে, কাউকে পেটাবার হলে মোটা অভীক কে; ঠিক তেমন ই পরীক্ষার আগে সজারুকে সবাই একটু তোষামদ করে চলে। শেষ কয়েকবছরের প্রশ্নপত্র দেখে এবং সালভর স্যারেদের মতিগতি বিশ্লেষন করে ও ঠিক করে এবছর কোন ম্যাপ পয়েন্টিং গুলো প্র্যাক্টিস না করলেও চলবে আর কোন এক্সট্রা গুলো না করে গেলেই বিপদ। সাজেশান অতি প্রয়োজনীয় বস্তু অনেকটা ক্রিকেটের অ্যাবডোমেন গার্ডের মতো, সাথে থাকলে মনে ভরসা হয় ।
পরীক্ষা টা মাধ্যমিক বলে বোধহয় সেবারে সজারুর বিশ্লেষণের ব্যাপ্তিও বেড়েছিল। সব সাজেশান হাতে পাওয়ার পরে দেখা গেল তার আকার সিলেবাসের থেকেও বড়। অতঃপর তৈরি হল সাজেশানের সাজেশান, এবং পরীক্ষা আসতে আসতে তারও দু-তিন টে ছোট ছোট সুলভ সংস্করন তৈরি হল, আর তার মধ্যে একটা কে ফলো করে তোতন ফেল টা কে আটকাতে পারল ফাইনালি। গঙ্গার ধারের ওই নাচ টা নেচে ছিল কিনা সেটা অবশ্য জানা যায়নি।
লেখক ~ অনির্বাণ ঘোষ
প্রচ্ছদ চিত্রঃ dawn.com
4 comments
Duum kore shes hoye gelo na..baparta?
Pranab more stories of Toton is on its way, stay tuned! And try our new thriller this week!