
তোতন আসিয়াছে ফিরিয়া
আর্যভট্টের বংশধর
পরীক্ষা পদ্ধতি টাই তোতনের নাপসন্দ। “সব মুখস্থ করে রেখে দিচ্ছি, কিন্তু সেটা লিখে দেখাতে হবে কেন!” যাই হোক, ইতিহাসে বেশ কিছু উত্থান পত্তন, ভূগোলে মা গঙ্গার আঁকাবাঁকা গতিপথ আর ধান ও পাট চাষের অনুকূল আবহাওয়া, ভৌতবিজ্ঞানে ওহম জুল ফ্যারাডে; এগুলো না হয় ম্যানেজ হয়েই যাবে। বাগে আনা চাপ শুধু ওই বখে যাওয়া মাল টা কে। অঙ্ক!
সরল-এর উত্তর আজও তোতনের ২৮৯ পূর্ণ ৩৩৭ এর ১০৮ এ এসে ঠেকে। বাইরে বেরিয়ে শোনে উত্তর ছিল ১। পার্থদার কাছে কিছুটা কন্ট্রোলে আনা গেলেও বাকি পুরোটাই শীতলাতলা কালীমন্দিরে সাপ্তাহিক ইনভেস্টমেন্ট এর ভরসা।
পার্থদা নিজেও স্কুলের টিচার। ওনার মুখেই শোনা কোন একবারের অঙ্ক পরীক্ষার গল্প। মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র সব ছাত্রদের দেওয়া হয়ে গেছে। পরীক্ষা শুরু। ১ ঘন্টার মধ্যেই চারিদিক থেকে খবর আসতে শুরু করল যে ছোঁয়া যাচ্ছে না একটাও অঙ্ক। সবকটা ক্লাস ১২ এর সিলেবাস থেকে দিয়ে দিয়েছে। খাস খবরে টেলিকাস্ট চালু। দিদি রাস্তায় নেমে শুয়ে পড়েছেন প্রতিবাদে। সব স্কুলে স্কুলে ভাংচুর শুরু। অথচ পার্থদার রুমে সবাই নির্বিকার চিত্তে একমনে লিখতে ব্যাস্ত। সত্যি বড় মেধাবী মনে হয় ছাত্রগুলো।
তৃ্তীয় ঘন্টা বাজার সাথে সাথেই সবাই যে যার মতো খাতা জমা দিয়ে হাওয়া।
– “কোন স্কুলের সীট পড়েছিল গো পার্থদা? এতো ট্যালেন্টেড ছেলেপুলে!” বেশ কৌ্তুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তোতন।
– “হা হা! ব্যানার্জীহাট্ বয়েস্। ট্যালেন্ট কিনা জানি না। তবে পরে জানা গেছিল যে ওরা কেউ ধরতেই পারেনি যে অঙ্কগুলো সোজা না শক্ত!”
ফ্রাসটু খাওয়াবার একটা লিমিট থাকে, কিন্তু তা বলে এইভাবে!
দিনের শেষে ঘুমের দেশে
– “স্যার, খাবেন নাকি? বাপি চানাচুর !”
– “আহ্! আবার এইসব কেন পরীক্ষার সময়? দে দুখান এনেছিস যখন।“
সৌম্যদীপ ছুটে গিয়ে ঠোঙ্গা টা ধরিয়ে দিয়ে আসে তাপস বাবুর হাতে। স্যারের চশমা টা ভারী অদ্ভুত। হরলিক্সের এর শিশির তলার কাঁচ ভেঙ্গে যেন বানানো। চোখ দুটো ডাইনোসরের মতো বড় মনে লাগে।
আধঘন্টা পর। ছাত্র রা একমনে লিখে চলেছে। স্যার চুক চুক করে ছানাচুর চিবোচ্ছেন আর একদৃষ্টে পিকলুর দিকে চেয়ে আছেন।
– “এই, চার এর “গ” এর টীকা টা দেখা,” লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে পিকলুর খাতার দিকে চেয়ে ফিসফিস্ করে বলে উঠল তোতন।
পিকলু ঘাড় না ঘুরিয়ে স্যারের দিকে চেয়েই মিহি সুরে জবাব দিলো।
– “স্যার তাকিয়ে আছেন।“
– “আরে পাগল! স্যার অলরেডি Gone Case। চোখ খুলেই ঘুমোন উনি। চানাচুর এফেক্ট।“
পিকলু হতবাক হয়ে স্যারের দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে স্যারের দুচোখের পাতা এক হয়ে আসে।
– “আচ্ছা তুই সিওর যে এটা চার এর “গ” এর ই উত্তর?”
তোতনের এই গুণ টার সাথে পিকলু ওয়াকিবহাল। টোকবার সময় ই ও একমাত্র বোঝবার চেষ্টা করে উত্তর গুলো। হল কালেকশানের সাথে নলেজ টাও একটু কালেক্ট করে নেয় আর কি!
মাঝে মাঝে অন্য সাবজেক্টের বোকা মতো কোন স্যার গার্ড পড়লে তো আর কথাই নেই।
– “স্যার একটু আসবেন?”
– “কি হয়েছে?”
– “স্যার, তিন এর “চ” এর চা নিয়ে অঙ্কটা ভুল আছে মদন বাবু বলে গেলেন। ওটা নিয়েই একটু জিজ্ঞেস করতে পারি অঞ্জনকে?”
– “হুমম্ কর, তবে আস্তে আস্তে।“ এই বলে স্যার পেছন ঘুরে হাঁটতে শুরু করলেন।
– “অঞ্জন, ক্যালানি না খেতে চাইলে চট্ করে বল ক্যালরিমিতির মূল নীতি।“
পেছন থেকে বিশ্বাসঘাতক সন্তুর গলা শোনা গেল, “স্যার, চা তো ছুতো!“
আমি তোমাদেরই লোক
অনেকদিন পর নিজের বাবা মা বা গার্লফ্রেন্ড কে দেখেও এতো আনন্দ হয়নি যতটা ঘোষাল বাবু কে দেখে তোতনের হল। মাধ্যমিক ইংরেজি প্রশ্ন শালা এবারে চটকে চৌঁষট্টি। আর্টিকেল প্রিপোজিশান গুলোর পোজিশান ই ঠিক করতে পারছে না তোতন। এমন সময়ে প্রবেশ নিজের স্কুলের ইংরেজির টিচার ঘোষাল বাবুর। দেখতে এসেছেন অন্য স্কুলে নিজের ছেলেরা কেমন পরীক্ষা দিচ্ছে। আগের বারের দুর্ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, সেটাও একটু ভয় এবার তোতনের স্কুলের টিচারদের।
যাই হোক, ঘোষাল বাবু রুমে ঢুকে প্রথমেই দেখা করলেন সামনে প্ল্যাটফর্মে বসে থাকা কড়া মার্কা গার্ড টার সাথে। দু একটা বাক্য বিনিময়ের পর স্যার নামলেন আমাদের মাঝে। ঘুরে ঘুরে দেখছেন। মুচকি মুচকি হাসছেন। আর ওদিকে গার্ড বাবু শকুনের মতো ওনার ওপর নজর রাখছেন।
ভেন্ট্রিলোকুইসম্ আগেও দেখেছে তোতন। তবে তার যে এতো সুদূর প্রসারী ক্ষমতা থাকতে পারে, সেটা ওর জানা ছিল না।
– “A, the, an, an, a, the, a……. পাস্ করে দে…”
স্যারের মুখে হাসি। অথচ পাশ দিয়ে গেলেই হালকা সুরে ভেসে আসছে দৈব বাণী।
– “On, above, in, at, ago, before, by…… সবাইকে জানিয়ে দিস কিন্তু, চেপে রাখিস না। 1b 2c 3c 4a… ..5 এর টা ভুল আছে, অ্যাটেম্প্ট করলেই ফুলমার্ক।”
ভগবান তুমি যুগে যুগে দূত পাঠায়েছ বারে বারে।
ওহ্, আগের বারের কথাটা তো বলাই হল না। সেবার কড়া গার্ড পড়ায় ছাত্ররা টুকতে না পারার ফ্রাস্ট্রেশানে ক্লাসরুমের পাখার ব্লেড গুলো ধরে সবাই ঝুলে পড়েছিল। পরীক্ষার পর সবকটা পাখা কে পদ্ম ফুলের মতো অবস্থায় পাওয়া যায়।
মুছে যাওয়া দিনগুলি
তোতন আর ছোট নেই। কলেজে ফার্স্ট ইয়ার। কলেজের নামটা আর নাই বা বললাম, শুরু করলে শেষ হয় না। যাই হোক, মাধ্যমিক উচ্চ-মাধ্যমিক এর গণ্ডি পেরিয়ে এখন সামনে শুধুই সেমিস্টার।
কলেজের ডেস্ক গুলো সব একজন করে বসার। সাদা রঙ করা। তাই সেমিস্টার শুরুর আধ ঘন্টা আগে থেকেই এফর্ট টা বেশি দিতে হয়। ০.৫ বল পেন দিয়ে সবাই মন দিয়ে ডেস্কের ওপরেই চোথা বানাতে ব্যস্ত। পরীক্ষা শুরু হতেই বোর্ড নিয়ে ডেস্কের ওপরে রেখে লেখা চালু। দরকার পড়লেই পাতাল প্রবেশ।
ডিরেক্টরের কানে গিয়ে পৌঁছল খবর টা। উনি হবুচন্দ্র রাজার মতো নির্দেশ দিলেন সমস্ত ডেস্ক চকচকে গাঢ় নীল রঙ করে দেওয়া হবে। হলও তাই। পেনের লেখা আর দেখাই যায় না।
উপায় টা অবশ্য তোতন ই বার করল অবশেষে। “আলোক রশ্মির বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন” আর “সকলের তরে সকলে আমরা” মাথায় রেখে বুদ্ধি বাতলালো। যে যার সামনের ডেস্কে পেনসিল দিয়ে লিখবে। তারপর পরীক্ষার সময় প্রতিফলিত চোথা দেখবে একে অপরের।
কলেজের দেওয়াল গুলোর ও যে কান থাকে সেটা তোতন জানত না। ডিরেক্টর হবুচন্দ্র আঁটলেন শেষ ফন্দি।
এখনও তোতনের কলেজে প্রত্যেক সেমিস্টার এর ১৫ মিনিট আগে সব রুমে ৪ জন করে গ্রুপ ডি স্টাফ আসে ইরেজার নিয়ে। ওনাদের সাফাই কর্ম শেষ হওয়ার পরেই প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়।
তোতনের আরও কীর্তিঃ
Valentine দেহি নমোহস্তুতে
মাধ্যমিকের গ্যাঁড়াকলে
অ্যাই ছেলে! কতো পেয়েছ অঙ্কে?
Bicycle Diary – Story Of A Two Wheeler
লেখক ~ অরিজিৎ গাঙ্গুলি
প্রচ্ছদ চিত্র উৎসঃ commons.wikimedia.org
প্রচ্ছদ চিত্র অলঙ্করণ : Anari Minds
6 comments
Ja ta bhai……puro school life ta chokh er samne mele dhorli……thanku!!
Thank you bhai 🙂
Nice 🙂 sei clg er kotha mone porlo abar same clg same class room hobu chandra r mathay sudhu bhul bhal idea astoh .. 🙂 bhalo laglo pore ..
Hobuchandra bole katha. Idea to asbei. 😀
Thanks for reading Arijit.
Besh mojar ghotona gulo… Aar lekha ta o besh sorol sundor. Porte bhalo laglo.. Beshi jotil bhasa e likhle ami pore Kichu udhhar korte pari na. Taai kudos👍👍👍… Amaar Sudhu ekta e prosno… Ei gulo Ki sotti ghote chilo ???
Thank you Snigdha. Tumi o ebar banglae lekho kichhu. 🙂
Amader sudhu ektai uttor. Haan sob sotti. Sudhu naam gulo ektu jumble up kora achhe.
Comments are closed.