
নশ্বর
লেখক ~ অনির্বাণ, আনন্দ, অরিজিৎ, স্নিগ্ধা
কারা কোন ভাগ টা লিখেছে? সেটা কমেন্ট সেকশানে আপনারাই আন্দাজ করুন দেখি!
অসংখ্য ধন্যবাদ শান্তনু আর তানিয়া কে আমাদের এই পাগলামো বরদাস্ত করার জন্য।
1
ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। ঘেমে পুরো জল হয়ে গেছি, গলা কাঠ, ঢং ঢং করে দেয়াল ঘড়িতে ২ টো বাজলো। এই নিয়ে ৩ দিন পর পর এক ই স্বপ্ন দেখলাম, স্বপ্ন? যেন মনে হচ্ছে খুব ই সত্যি! বেড সুইচ অন করতেই একঝাঁক আলো ঘরে ছড়িয়ে পড়লো।
ফিল্টার থেকে ২ গ্লাস জল খেয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। শরতের প্রথম হালকা শীতল হাওয়া মনটাকে জুড়িয়ে দিলো। নিজেকে বোঝালাম, “কি যা তা দুশ্চিন্তা ভাবছি? কদিন খাওয়া দাওয়ার গোলমাল হয়েছে। কাজের চাপ টাও বেড়েছে।”
মুখে চোখে জল দেবার জন্য বেসিনের কাছে গেলাম। জলের ঝাপ্টা দিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে একবার আয়নার দিকে চোখ চলে গেল। ঠোঁটের কোণে কাটলো কখন? ছোট্ট তাজা কাটা, রক্ত টা জলে ধুয়ে গেছে। তবে কি…??
পরের দিন সকালে জলখাবার করতে গিয়ে মনে হলো এই খাবার গুলোর কোনো স্বাদ ই নেই। কোনো মতে ২-১ চামচ খাবার খেয়ে যন্ত্রের মতো অফিস যাবার জন্য বেরলাম। এক অদ্ভুত দোলাচল চলছে মনে। আমার মধ্যে যেন ২ টো মানুষ বাস করছে। চিন্তাভাবনা গুলো কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
বাসস্ট্যান্ডে রহিমের মটন এর দোকানের সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে পড়লাম। তাজা রক্ত ছড়িয়ে চারিদিকে। একরকম মাদকতা আমাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।
“দাদা। নিয়ে যান না। দাম কম যাচ্ছে।” রহিমের ডাকে সম্বিৎ ফিরলো। “না,” বলে আমি একটা চলন্ত বাসেই ঝাঁপিয়ে উঠলাম। জানলা দিয়ে দেখতে পেলাম রহিম অবাক হয়ে বাসের দিকে তাকিয়ে।
2
– “সুস্মিতা কোথায় জানিস?”
কম্পিউটারের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে দেখলাম সামনে শাশ্বত। মোটা কাঁচের ওদিক থেকে ওর চোখগুলো আরও বড় দেখায়।
– “না তো। কেন কি হল?”
হঠাৎ চশমাটা খুলে আমার মুখের দিকে ঝুঁকে এল শাশ্বত। সকালে শেভ করার সময় গালটা কেটেছে মনে হয় ওর! জমাট বাঁধা রক্তের দানাটাকে খুঁটে দেখতে ইচ্ছা করছিল, কেন জানি না।
– “সুস্মিতাকে তিন চারদিন ধরে পাওয়া যাচ্ছে না, তুইও এইকদিন অফিসে আসিস নি, তাই ভাবলাম তোরা দুজনে একসাথে কোথাও হয়ত…”
– “আমি তো বাড়িতেই ছিলাম, প্রোজেক্টের কাজটা শেষ করতে হত। কয়েকদিন আগেই তো আমাকে বলল বাড়ির লোকেদের সাথে অযোধ্যা বেড়াতে যাচ্ছে, ফোনের টাওয়ার থাকবে না, আমি যেন চিন্তা না করি।”
– “অযোধ্যা টযোধ্যা সব ফালতু কথা, একটু আগে ওর বাবা এসেছিলেন, বললেন ওকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ফোনও আনরিচেবল।”
– “হোয়াট! এখুনি থানায় একটা ডায়েরি করতে হবে তো তাহলে। ফের বাড়িতে ঝগড়া করে বেরিয়েছে মনে হয়, গল্ফগ্রিনে একটা বান্ধবি থাকে, ওখানেই পাওয়া যাবে।”
– “নাঃ। গল্ফগ্রিনে নেই, কোনও ঝামেলাও হয়নি বলল ওর বাবা, থানায় ডায়েরিও করেছে ওরা, তবে একটা জিনিসে সন্ধেহ লাগছে, পল্লবী বলল ওকে অফিস ছুটির পরে মৈনাকের সাথে বেরোতে দেখেছিল লাস্ট ফ্রাইডেতে, তারপর থেকেই বেপাত্তা।”
মৈনাকের নাম শুনেই আমার চোয়ালটা শক্ত হয়ে গেল।ছেলেটাকে আমার সহ্য হয় না, বেহালাতে সুস্মিতার বাড়ির কাছেই থাকে। কোনদিন আমি অফিসে আটকে পরলেই ওকে লিফ্ট দেওয়ার সুযোগটা ছাড়েনা হারামিটা।
3
আমি সিট থেকে উঠে সোজা মৈনাকের সিটের কাছে গেলাম।
– “মৈনাক… বাইরে আয় একটু। জরুরি কথা আছে।”
– “কেন কি হয়েছে?”
বলতে বলতেই ও আমার পেছন পেছন অফিসের বাইরে এল।
– “সুস্মিতা কোথায় রে?”
– “মানে! আমি কি করে জানব? আর শোন, তুই আমার থেকে একটু দুরেই থাক। সেদিন যা করলি, আমার এখনো মাথা টা গরম আছে কিন্তু।”
– “বুঝলাম না। কি করেছিটা কি আমি? আর সুস্মিতা তো তোর সাথেই বেরিয়েছিল।”
– “অদ্ভুত লোক তো তুই! সাঙ্ঘাতিক অভিনয় জানিস দেখছি! তুই তো আমাদের পেছনে এসে ওই মোড়ের মাথায় আমাকে যাতা খিস্তি খেউর করলি। আবার সুস্মিতা থামাতে গেল বলে তুই ওর ওপরেও হাত তুললি। তারপর তুই ই তো ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলি নিজের সাথে।”
এইটা শোনার পর ই আমি অবাক হয়ে গেলাম। পায়ের নিচের মাটি যেন দুলে উঠল। তাহলে কি ওইটা স্বপ্ন ছিল না? খানিকক্ষণ চুপ করে মৈনাকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আর কিছু না বলে দ্রুতবেগে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। মৈনাক টা কিরকম একটা হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
কখন আর কিভাবে যে বাড়ি পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। তবে একটু ধাতস্থ হতেই ওই বারান্দার শেষে যে স্টোররুম টা আছে, সেটা খুলে দেখলাম।
সেই বড় করাত টা পড়ে আছে মাটি তে। কাছে গিয়ে দেখলাম কিছু একটা কালচে রঙের লেগে ওটার গায়ে। রক্ত নাকি! কেন জানি না আমার মধ্যে অন্য কেউ ওটা মুখের কাছে তুলে একটু চেখে দেখতে চাইল। ছিঃ ছিঃ, আমার কি হয়েছে! ভয়ে দূরে ছুঁড়ে দিলাম করাত টা।
এবার ধীরে ধীরে ওই পুরোনো খাট এর তলায় তাকালাম। যা দেখলাম, মনে হল যেন আমার গোটা শরীরটা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
এটা তো সেই স্যুটকেস টা! যেটা আমি স্বপ্নে দেখেছিলাম। তাহলে এর মধ্যে কি……?
ভয়ে ঢোঁক গিললাম।
4
– “কি রে, দুদিন ছিলিস কোথায়। কাল থেকেই তো পুজোর ছুটি! তার মধ্যেই এত ডুব মারছিস?”
শাশ্বতর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলাম, “একটু মেন্টালি ডিস্টার্বড ছিলাম। পরশু সুস্মিতা ফোন করেছিল।”
– “মানে? ওকে তাহলে পাওয়া গেছে? বলিস কিরে?”
– “সুস্মিতা হারায়নি। পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
– “তাহলে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিল কাউকে না বলে?”
শাশ্বত আজ আর শান্ত হবে না। বোতল থেকে এক ঢোঁক জল খেয়ে নিলাম।
– “মৈনাক ওকে লুকিয়ে রেখেছিল। দুজনের ই ট্রান্সফার ফাইনাল হয়ে যাওয়ায় ওরা বাড়িতে না জানিয়েই পুনে চলে গেছে।”
– “মানে! ওরা দুজন…..?”
– “হ্যাঁ, তুই যা ভাবছিস, ঠিক সেটাই। তাই এটা নিয়ে প্লিস আমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিস না।”
– “তাই ভাবি মৈনাক টার ও দুদিন পাত্তা নেই কেন! তা তুই কিছু বললি না? মৈনাক কেও ছেড়ে দিবি এইভাবে?”
“ওরা দুজনেই যাতে একসাথে ভালো থাকে, সেই কামনাই করি,” এই বলে আর কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লাম।
মিথ্যে বলাতে আমি আরও পোক্ত হয়ে উঠেছি দেখছি।
***
বাড়ির ঠিক পাশেই পুজো হয়। তাই ঠাকুর আনতে যাওয়ার অনুরোধ ফেলতে পারিনি। কিন্তু ঠাকুর কে বেদী তে তোলবার সময়েই ওই অদ্ভূত অনুভূতি টা হল। কেন জানি না অসুর এর বুকের ক্ষত টার দিকেই বারবার চোখ চলে যাচ্ছিল। আর মায়ের মনোরম মুখের দিকে চোখ তুলে চাইতে পারছিলাম না, অপরাধ বোধে হয়ত।
ভেতর থেকে একটা অজানা ভয় আর অসুরের ক্ষত ছুঁয়ে দেখার দোলাচলের মধ্যেই বুবান এর ভুলে ত্রিশূল এর খোঁচা খেয়ে কেটে গেল বুকে। ছেলেটার ও অবশ্য দোষ নেই, ত্রিশূল টা লাগাতে যাচ্ছিল অসুরের বুকে আর আমি ও আনমনে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম বোকার মতো।
মাঝরাত থেকেই মায়ের বোধন শুরু। কিন্ত ঘরে এসে ক্লান্তিতে আর জেগে থাকতে পারলাম না।
***
ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলাম। ভয়ে দ্রুত নিশ্বাস নিতে নিতে দেখলাম ঘড়িতে ঠিক ২টো। গলা শুকিয়ে কাঠ। দরদর করে ঘামছি। আবার সেই স্বপ্ন!
বেডসুইচ অন করলাম। এই স্বপ্ন টা কি আমাকে পাগল করে দেবে? সেই বারান্দার পাশের স্টোররুম, সেই রক্ত লাগা করাত, সেই পুরোনো খাটের তলায় রাখা স্যুটকেস।
শুধু সুস্মিতার জায়গায় এবার মৈনাক!
কি মনে হলো, হঠাৎ বিছানা থেকে একলাফে নেমে বারান্দায় বেরোলাম। ঘুমচোখে অন্ধকার বারান্দা দিয়ে এগিয়ে চললাম স্টোররুমের দিকে। খুব তীব্র একটা গন্ধ এখানে। দরজা খুলে বাল্ব টা জ্বালতেই দেখি…….
খাটের তলায় এখন দুটো স্যুটকেস!
***
বাইরে পুজো শুরু। ঢাকের আওয়াজ কানে আসছে। মায়ের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে মনে হয়। হঠাৎ বুকের কাছে চিনচিন করে উঠল ব্যাথাটা। কাটা জায়গা টায় হাত দিয়ে চমকে উঠলাম! জামা সরিয়ে দেখি ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসছে রক্ত।
অসুরের সময় মনে হয় শেষ হয়ে আসছে।
প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ Anirban Ghosh
প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds
লেখক ~ অনির্বাণ, আনন্দ, অরিজিৎ, স্নিগ্ধা
কারা কোন ভাগ টা লিখেছে? সেটা কমেন্ট সেকশানে আপনারাই আন্দাজ করুন দেখি!
25 comments
darun…………
ke kon bhag likheche jana nei …chai o na ..tobe je vabe seta r modheye mosreen taal mil choleche eta sposto je sab kota vage e sober e obodaan …. erokom cholte thakuk …amra o valo valo lekha porte thaki
Bhalo laglo… Besh foggy story.
Amar mone hoche 1st ta Snigdha er lekha and last ta Arijit.Baki duto bujte parchi na.Besh compact laglo.Honest try:-)
Thank you Prapti. 🙂
muktisnaan er por roktosnaato golpo !! …… compact hoechhe, 4 jon lekhok mile khub sundor bhabe golper uniformity maintain korechho…..shuru korechhe Anondoda ar iti tenechhen Arijitda, baki guess korte parlamna…….tobe honest personal opinion dile, ei khunokhuni, negative side of human character tule dhora byaparta amar pochhonder taalikate pore na……ek kothay mon ta kharap hoye jay ei jatiyo golpo porle……..so, looking forward to positive golpo !!!
Feedback dewar jonno asonkho dhonnobad Samali. 🙂 Haan, eta ektu negative galpo. Asole thriller korte gele puro ta positive rakha khub kothin hoye pore. R amra to sobe lekhar playhouse e pori. Tai tomar suggestion matha pete nilam. Khub taratari positive galpo pabe. Chokh rekho.
Order guess korar jonno thanks. Result obdhi wait koro.
রোমহর্ষক …..😦😦😦😦
Thank you Kathakali!
Khub Bhalo!!!
Order ta Anirban Da, Ananda Da, Snigdha Di and Arijit Da..
Thank you Kangkana porbar jonno. Order ta to thik holo na! 🙂
darun laglo…
Thanks Soumyajit. Kintu ekta prosno. Tor ki kono lekhai kharap lage na? Sobsomoy e bolis darun hoyechhe 🙂
Bah darun golpo.khub e compact. Monei hocche na oneke mile lekha. Story line tao khub bhalo.keep it up.
However no idea about the sequence.
Thank you Avik for reading. Sequence ta reveal hobe khub taratari. Aro lekha porte paren. Bhalo lagle abossoi asben abar.
সকলেই সমান দক্ষ ।তাই কে কোন ভাগটা লিখেছেন বলতে পারব না ।অবশ্যই কে কোনটা লিখেছেন তাতে আমার কোন মাথাব্যথা নেই।একটা সুন্দর লেখা পেয়েছি এটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় পাওনা। আপনাদের এই পাগলামি বজায়
রাখুন তাতে আমরাই লাভবান হবো। আরো সুন্দর সুন্দর গল্প পড়ার সুযোগ পাবো।
অসংখ্য ধন্যবাদ অমল বাবু আপনাকে। আমাদের সাথে থাকুন। আশা করি আশাহত করব না। 🙂
Awesome thriller….superb story…waiting for another one…
Order:anirban da , ananda da , snigdha di , arijita da
Thanks Arijita. Keep following this space for the result.
lekhata khub tantan . mone hocche 2nd para ta anander.
Thank you Dipanwita. Apnar onuman sothik kina seta khub siggir reveal kora hobe. Sathe thakun.
Khub gochano :)..
Order ta Ananda da,Anirban da,Snigdha di and Arijit da (mone holo)..
Ananda da, Anirban da, Snigdha di and Arijit dar tarof theke Supurna kakima ke janai result khub siggir e berobe. Chokh rakhun ei dada didir page e. 🙂
Osadharon…valo prochesta ….
_/\_
Thank you Subhra. Be ready. “Bithi” is coming this weekend. All d best! 🙂
Comments are closed.