ম্যারিটাল রেপ

Facts, Friends, Ideas, Marriage, Protest, Red, বাংলা

প্রথমবার শরীর স্পর্শ করার সময় একরাশ জড়তা তোমায় অবশ করেছিল প্রায়। ইতস্তত করেছিলে হাত বাড়াতে ওই নেশার খিদে মেটাতে। সেবার তুমি পারোনি আমায় ভোলাতে, আক্ষেপ ছিল বেশ অনেকখানি আদিম সত্যের হাতছানিতে। পরের বার অবশ্য খামতি রাখোনি। জড়তা কাটিয়ে ক্ষুধার্ত হায়নায় মতো, ঝাঁপিয়ে পড়েছো ওই ইঞ্চি মেপে চর্বি জমানো নাভির আশেপাশে, খানিকটা হাঘরের মতোই বলা চলে। খুব কানে লাগলো, তাই না? হ্যাঁ, হা-ঘরেই। নেশার মতো বার বার কাছে আসতে চাইতে তুমি অমৃতস্বাদের খোঁজে। কাছে আসা যাওয়ার মিথ্যে অভ্যাসে ভুলে আমি প্রেমে পড়েছি তোমার বোকার মতো।

প্রথম প্রথম আঙ্গুলের ফাঁকে জমে থাকা ঘাম চেটে খাওয়া পোশাকি ভালোবাসায় আমি ভুলেছি, একবার না বারবার, নির্বোধের মতো। অপরিণত ভালোলাগা গুলো বুঝতে দেয়নি একদিন ওই হাতের ঘাম মুছতে রুমালও ভিজে যাবে, কিন্তু অন্য কোনও হাত আর এগিয়ে আসবে না। ক্রমেই হারিয়ে গেছি আমি ভালোবাসা থেকে। এখন আর হাত ধরে বসে রোজকারের ওই প্যানপ্যানানি কথা শুনতে ইচ্ছা হয়না। বারে বারে নোংরা ছুকছুকানি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। লোভীর মতো ওঁত পেতে বসে থাকো ওই অনুভুতির জন্যে। এখন আর অনুভুতি আসেনা, অভ্যাস হয়ে গেছে কেমন। তোমারও আজ কাল আর খিদে মেটে না। তৃষ্ণা মেটাতে এখন পুরোটা লাগে। মনের সব তৃষ্ণা এখন শরীরে চলে এসেছে।

নেশার ঘোরটা বেশিদিন টেকেনি; ভালোলাগা চাওয়া পাওয়া এগুলো আসতে আসতে অভ্যাসে পরিনত হলো। আমি হারিয়ে গেলাম ফোনের টপ কনট্যাক্টস থেকে ইনবক্সের ভেতরে, কষ্ট করে হাতড়াতে হয়। শরীর ছুঁতে এই আকুলিটা বিরক্তিকে ডেকে আনতো, কিছুটা অধিকারের জন্ম দিয়েছিলো কুঁচকির আসে পাসে। কাজ শেষ, আবার যে কে সেই। পাশে বসে থাকা মানুষটার থেকে স্কাইপির মুখগুলো বেশি কাছের মনে হতো। কিন্তু বাঁধা একজায়গায়, আমি তোমায় বেসেছি ভালো। এই ভালবাসা থেকেই নির্লজ্জের মতো একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে কথা গুলো দিনের পর দিন ভাঙ্গা টেপের মতো কানের কাছে বলে যেতাম আমি। তুমি শুনতে, কিন্তু উত্তর দিতে না। অভিব্যক্তিই জানিয়ে দিতো বাকিটা। যে ভালোলাগা কে প্রশ্রয় দিয়ে শুরু করেছিলে কাছে আসা, যে আঘাতে করেছিলে ঘায়েল, সেই আঘাত দিয়েই আবার আমায় একলা করলে। আঘাত দিয়েই মনের জোড়া,  আঘাতেই ভাঙ্গন; কোনটাতেই আওয়াজ হয়নি, শুধু একটু রক্ত ঝরেছিলো।

তখন তুমি বদলে ফেলেছো ফোনের নাম্বারটা। এক ছাদের তলায় বহুদিন দেখা হয় নি আর;  ফেসবুকেও ব্রাত্য আমি, পাছে তুমি নাগালে আসো। অফিস যাওয়ার রাস্তাটাও গুগুল ম্যাপে খুঁজে পাওয়া যায় না, পাছে আমি পথ আটকাই তোমার। কিন্তু আমি ছুটবো কার জন্যে? সেই যে এক অভ্যাস ছেড়ে, অন্য অভ্যাসের খোঁজে? তোমার আমার জীবনের ওই চ্যাপ্টারের পাতা গুলো তো তুমি নিজে হাতে আঠা লাগিয়ে বন্দী করে রেখে গেছো; পাছে কেউ না খুলে দেখে। কিন্তু যে অন্ধকার ছেড়ে গেছো, তার দায় কে নেবে?

ধন্যবাদ তবে পাওনা আছে তোমার। ওভাবে একলা ফেলে না গেলে আমি জানতামই না যে অন্ধকারে কেউ আমার জন্যে চাঁদ হয়ে বসে আছে। আমি তার অভ্যাস নই, আমি তার উপস্থিতি, আমি তার পূর্নতা। টিসু পেপারগুলো এখন ডাম্প হয়ে পড়ে আছে, কেজিদরে বেচে দেওয়ার জোগাড়। ভালোলাগা গুলো এখন আমার কাছে নতুন করে হাজিরা দিয়ে যায়। তোমার কথা আজকাল মনেই পড়ে না। নেশার মতো লক লক করে নাভির আসে পাশে যে চর্বি গুলো চেটে বেড়াতে সেগুলোকেও বিদায় দিয়েছি আমি। নিয়ম করে জিমে যাই, ঠিক যতটা নিয়ম করে রোজ সকালে স্নানের পর সিঁথিটা  রাঙ্গিয়ে তুলতাম।

আমি জানি না তুমি কেমন আছো? নির্ঘাত এদিক অদিক ছুকছুক করে বেড়াচ্ছো নতুন খাবারের নেশায়। লেনা দেনার পর যখন আবার নিজের ঘরে ফেরো, ওই বিছিয়ে থাকা জামা কাপড় গুলোকে একটু সরিয়ে নিয়ে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দাও বিছানায়; আমি জানি তখন তুমি আমায় খোঁজো। হুইপ জারি করার মানুষটাই যে আর নেই। তবে আমার খোঁজ তুমি রাখো, নাহলে সেদিন রাতে ভুল করে কেউ ফেসবুকে ছবি লাইক করে নাকি…!! আরো অনেক ছবিই দেখেছো, তবে একটায় ভুল করে লাইক পড়ে গেছে; সেটা আমি বুঝি। আমি অন্য কারো সাথে ভালো আছি এটা দেখে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠবে, যদিও খুশি হওয়ার কথা ছিলো। সেই আঠা লাগিয়ে আসা পৃষ্ঠাগুলো এখন কেবল ইতিহাস, টানাটানি করলে ছিঁড়ে আসবে হাতে, পাতা উলটোবে না।

কে যেনো বলেছিলো, “ মানুষ পেয়ে হারানো বা না পাওয়ার আঘাত সইতে পারে, কিন্তু তার অন্যের হয়ে যাওয়াটা কখনই মেনে নিতে পারে না, কোনও ভাবেই না। ”

না মানুষ বদলায়, না অভ্যেস;  বদলায় শুধু ভালোলাগা আর অভিব্যক্তির ভাষাটুকু। পরিনতি তো নিমিত্ত মাত্র।

 

লেখক পরিচিতিসাবর্ন্য চৌধুরী

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ newsdogshare.com

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds