অপুর দুগ্গা

Childhood, Durgapuja, Friends, Nostalgia, Short Story, Story, আনন্দ আকাশ, বাংলা
অপু ধড়ফড় করে বিছানায় উঠে বসলো , সকালের চড়া রোদ জানলা দিয়ে মুখে এসে পড়ছে । কটা বাজলো ? এ বাবা ,৮ টা বেজে গেছে । মায়ের উপর খুব রাগ হল , একটু ডেকে দেবে তো । ধুর , ভাল্লাগে না ।
 
হন্তদন্ত হয়ে নামছিলো সিঁড়ি দিয়ে , দিদি টা পিছন ডাকলো –
 
” এই যে উঠেছেন মহারাজ , শোনো ব্রাশ করে ব্রেকফাস্ট করে সোজা বই নিয়ে বসে যাবে ।”
 
“বই নিয়ে বসবো মানে , পুজোতে কেও পড়ে নাকি ? “
 
দিদি যেন আকাশ থেকে পড়লো , –
 
“পুজো ? সে তো কত দেরি ! সবে তো চতুর্থী , পুজোর পর হাফ ইয়ারলি মনে রেখো ।”
 
এই এক বাগড়া , দিদিটার সব ব্যাপারে এই দিদিগিরি একদম ভালো লাগে না অপুর । অপু ফাইভ এ পড়ে , দিদি এবার ফার্স্ট ইয়ার । কলেজে যাবার পড় থেকে ওর সব ব্যাপারে দিদির মাতব্বরি বেড়ে গেছে ।
 
ব্রাশ করতে করতে দুর্গা দালানের দিকে হাঁটা লাগালো অপু । দালানের আগাছা পরিষ্কার , প্যান্ডেলের কাজ চলছে পুরো দমে । কিন্তু এ কি , দুর্গা মন্দিরের দরজা বন্ধ কেন ? তাহলে অপু যা ভয় করছিল তাই হয়েছে কি ?
 
“কাকু , সাধন কাকু কি চলে গেছে ?”
 
“হ্যাঁ তো , সেই কাকভোরে ।”
 
সাধন কাকু ওদের দুর্গা বানায় | মা বলে, দুর্গা মা এই পৃথিবীর সব কিছু বানিয়েছে, সেই দুর্গা মাকে বানায় সাধনকাকু, কত শক্তি !! মূর্তির কাঠামো বাঁধার দিন থেকে অপু সাধন কাকুর সাথে জোঁকের মত লেগে থাকে । সাধন কাকুর ফাই-ফরমাস খাটলে মনে করে ও নিজেও কারিগর । সাধন কাকু ওকে বলেছে সব কাজ হয়ে গেলে একটা দুর্গা ওকে বানিয়ে দেবে ।
 
কাল রাত্রেও সাধন কাকুর সাথে ও বসে দেখছিলো রং করা ।
 
“কাকু, চোখ টা কখন আঁকবে? “
 
” সব রং হয়ে গেলে সবার শেষে ।”
 
” কেন ? সবার শেষে কেন?”
 
” দুর্গা মায়ের চোখ টা তো সব থেকে সুন্দর , সেজন্য সব কাজ শেষ করে ধীরে ধীরে ওটা আঁকবো , সুন্দর করে ।”
 
হটাৎ বাবা এসে সব ভণ্ডুল করে দিলো –
 
“অপু অনেক রাত হয়েছে , চলো খেয়ে শুয়ে পড়বে ।“
 
” তুমি জানো বাবা , সাধন কাকু আমাকে একটা দুর্গা বানিয়ে দেবে বলেছে , আজ রাত্রে চোখ আঁকা হয়ে গেলেই আমাকে দেবে । আজ আমি এখানে থাকি?”
 
বাবা বকতে যাচ্ছিল, সাধনকাকু বাঁচালো –
 
“আরে কাল সকাল সকাল চলে এসো , আজ রাত্রে রং করবো না । তুমি আসার পরে করবো ।”
 
“দিব্যি কেটে বলো ।।”
 
“আরে ও বলছে তো , তুই না এলে ও রং করবে না । এখন চল তো অনেক রাত হয়েছে ।” – বাবা জোর করে নিয়ে চলে এলো ।
 
বড়োরা খুব পচা হয় , খুব মিথ্যা কথা বলে। কই অপু তো কখনো মিথ্যা কথা বলে না । অপুর চোখটা ঝাপসা হয়ে এলো ।
 
বাড়িতে ঢোকার মুখে আবার দিদির সাথে দেখা । কিছু বলতে গিয়ে ওর মুখ দেখে থেমে গেলো –
 
“কি হয়েছে ? “
 
“কিছু হয় নি ! ” – গলা ধরে এলো অপুর ।
 
দিদি সরে এসে ওর মাথায় হাত দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো –
 
“কেউ বকেছে ? “
 
এতোক্ষনের জমানো অভিমান বাঁধনছেড়ে দুচোখ বেয়ে নেমে এলো । ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কিছুক্ষন কাঁদার পর দিদিকে সব খুলে বললো ।
 
অদ্ভুত ব্যাপার, দিদি কিন্তু ওকে বকলো না , মাথায় হাত বুলিয়ে বললো , ” দাঁড়া ! আমি আসছি ।”
 
দিদি ঘরের ভিতর থেকে একটা মূর্তি নিয়ে বেরিয়ে এলো , –
 
“সাধনকাকু সকালে এটা দিয়ে গেছে , তুই ঘুমাচ্ছিলিস বলে ডাকিনি । ” – একটা ছোট্ট দুর্গামূর্তি, সিংহের উপর বসা ।
 
অপু একবার দুর্গামূর্তির মুখের দিকে তাকালো , একবার দিদির মুখের দিকে , দুটো মুখ ই মিলে মিশে একাকার ………………

 

 ==============================================================================

 

কলমে ~ আনন্দ

প্রচ্ছদচিত্র উৎস ~ whatsuplife.in

প্রচ্ছদচিত্র অলঙ্করণ ~ Anari Minds