একটু অন্য নেশা

Short Story, Story, Thriller, বাংলা

“না হে, খবরের কাগজগুলোতে আজকাল কিস্যু নেই। সেই এক বস্তা পচা খবর।”

সকালের বাসি পেপারটা টেবিলের ওপর ছুঁড়ে দিলেন ঘনশ্যামদা। সন্ধ্যে বেলা ক্লাবঘরে এসেই খবরের কাগজ পড়া আর তারপর কাগজটা এই ভাবে ছুঁড়ে দেওয়া শ্যামদার অভ্যাস। পেশায় প্রাইভেট কোম্পানির সিকিউরিটি ইনচার্জ হলেও শ্যামদা কিন্তু বেশ সরস। ক্লাবের সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের গুরু দায়িত্ব নিজে থেকেই আপন করে নিয়েছেন। ফি বছর দু’টো করে নাটক হচ্ছে, সঙ্গে বাচ্চাদের নাচ, বসে আঁকো, কিছুই বাকি নেই। আর সব কিছুর এক্কেবারে প্রথমে আছেন আমাদের এই শ্যামদা।

“রোজ রোজ আর আলাদা জিনিস কোথায় পাবে বলুন খবরের কাগজগুলো! ওরা তো আর সব বানিয়ে লিখতে পারেনা।” পাশ থেকে ফুট কাটলো রণজয়।

“তা বটে। জীবন থেকে নতুনত্বটাই উবে গেছে হে।” খানিকটা হতাশ ভঙ্গিতেই একটিপ নস্যি নাকে চালান করে দিলেন শ্যামদা। তারপর ফোঁত ফোঁত করে একটা খয়েরী রুমালে নাক মুছে নিলেন। রুমালটার আসল রং নিয়ে আমাদের অনেকের মনেই সন্দেহ আছে। তবে জিজ্ঞাসা করার সাহস কেউ দেখাইনি কোনোদিন।

“আপনি বরং মোবাইলে নিউজ অ্যাপ নামিয়ে নিন। দেশ বিদেশের সব খবর পেয়ে যাবেন।”

“তুই থাম্ তো হে ছোকরা। তোদের ওই মোবাইল সর্বস্য জীবনের কথা আর বলিস না।” রণজয় আর বুবুনের ফিচেল হাসি শ্যামদার চোখ এড়িয়ে যায়।

“যে জিনিস ছুঁয়ে দেখা যায়না, তার কোনো দাম নেই। আমার কাছে তো এক্কেরে নেই।”

“কি ব্যাপার, এতো তপ্ত আলোচনা কি নিয়ে? আমি তো রাস্তার ও’ মাথা থেকে শুনতে পারছিলাম।” দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢোকার সময় অনুপদার গলা পাওয়া যায়।

“শ্যামদার কাছে সব পুরোনো হয়ে গেছে, অনুপদা।” আবার ফুট কাটে রণজয়।

হাসতে হাসতে অনুপদা আমার পাশের চেয়ারটা দখল করলো। শ্যামদাও তাচ্ছিল্য ভরে নস্যি মুছে নেয় রুমালটা দিয়ে।

“তুই মোবাইলে কি ঘাঁটছিস রে সঞ্জয়? সামনে দোল, কিছু প্ল্যান প্রোগ্রাম বানা।” কথাগুলো উড়ে আসে আমার উদ্দেশ্যে।

“ওকে বান্ধবী আবার কড়কে দিয়েছে মনে হয়! সঞ্জয় এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। তুমিই বরং একটা প্ল্যান করো অনুপ।” নস্যির ডিবেটা টেবিলে ঘোরাতে ঘোরাতে বলে ওঠেন শ্যামদা।

“আরে কি যে বলেন শ্যামদা। ওসব কিছুনা। অফিসে একটা আর্টিকল জমা দিতে হবে। সেটার জন্যই নেট ঘাঁটছিলাম।”

“পুরোটাই কি নেট থেকে চেপে দেবে নাকিগো সঞ্জয়দা?” রণজয়ের ফুটকাটা গায়ে না মেখে মোবাইলটা পকেটে চালান করে দিলাম।

“এবার কি নিয়ে লিখছিস রে? তোদের পেপারে মিশর নিয়ে যে লেখাটা বেরোচ্ছে ওটা কিন্তু খুব ভালো। তুইও কি ওরম কিছু লিখছিস নাকি!”

“না গো, অনুপদা। ঐ লেভেলে যেতে আমার এখনও অনেক দেরি আছে।”

“তা, তোর লেখায় কঠিন আলোচনাই শুধু আছে, নাকি কিছু গপ্পও থাকবে?”

“সেতো লেখা হলেই দেখতে পাবেন শ্যামদা।” রণজয় সুযোগ পেয়েই পেছনে লাগার চেষ্টা করে।

“তুই থাম তো। খালি ফটর ফটর। আমরা কি ওর কম্পিটিটর পেপারের লোক নাকি, যে সব ফাঁস করে দেব!” রণজয়ের দিক থেকে এবার আমার দিকে ফিরে শ্যামদা প্রায় আদেশের সুরেই বলে “তুই বল দেখি কি লিখছিস, আমরাও একটু শুনি। কাজ তো নেই – তোর গল্প শুনে সময় কাটুক খানিক।”

“গল্প একটা আছে বটে, তবে সেটা ঠিক গল্প না। এই আর্টিকলটা লেখার জন্য একজনের সঙ্গে দেখা করেছি বেশ কয়েকবার। তাঁর মুখেই শোনা। সত্যি ঘটনা বলেই দাবি করেছেন তিনি। সেটাই খানিকটা গল্পের আকারে লিখছি এবার।”

“কি বলিস, সত্যি ঘটনা নিয়ে লিখছিস! শুরু কর, শুরু কর।” আবার খানিকটা নস্যি নাকে চালান করে সোজা হয়ে বসলেন শ্যামদা।

“মহিতোষ বাবুর মুখে শোনা ঘটনা। পূর্ণিয়ার জেলার ছিলেন একটা সময়ে। বদলির চাকরি, আর সেই সুবাদে পূর্ণিয়ায় কাটিয়েছিলেন বছর দুয়েক। তাঁর সঙ্গে আমার অবশ্য কথা হয়েছে বালির বাড়িতে বসে। তবে তাঁর বসার ঘরে কিছু কাপ মেডেল, পুলিশ পোশাকে প্রাইজ নেবার ছবি দেখেছি। ঘটনাটা পূর্ণিয়ায় থাকার সময়কার। ভদ্রলোক একটু বেশি কথা বলেন, হয়তো বাইরে থেকে খুব একটা বাঙালীর সাহচর্য না পেয়ে কথা বলার টান বেড়ে গেছে। তার জবানিতেই বলছি, শুনতে তোমাদের ভালো লাগবে।”

মহিতোষের কথা
————————-
রিটায়ার্মেন্টের তখন বছর দশেক বাকি। এমন সময় বদলির চিঠি পেলাম। নতুন লোককে চার্জ হ্যান্ডওভার করে রওনা দিলাম পূর্ণিয়ার উদ্দেশ্যে। বদলি হয়ে নতুন জায়গায় যাওয়া অনেকদিন আগেই অভ্যাস হয়ে গেছে। তেমন আর কিছু মনে হয় না। কিন্তু এবার একটু বেশ উৎসাহ পেলাম। জায়গাটার ক্লাইমেট খুব ভালো। মিনি দার্জিলিং বলে শুনেছি। তারপর কত লেখায় পূর্ণিয়ার কথা পড়েছি ছেলে বেলায়। এখানে বদলির কথা শুনে আমার গিন্নিও খুব খুশি। আমার শ্বশুর বাড়ি শিলিগুড়ির কাছেই। দু’শো কিলোমিটারেরও কম। তার বাপ্ মা সব তো কবেই মরে ভূত হয়ে গেছে, দু’টো ভাই আছে, তাও যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। তবুও বাপের বাড়ির টান গেল না।
তা হাজির হলাম পূর্ণিয়ায়। কোশি যদি পার হয়ে জেলে গিয়ে পৌঁছাতে প্রায় বিকেল হয়ে গেল। সেদিন আর কাজ কর্মের কিছু হলো না। পরের দিন পুরনো জেলার পাঁড়েজি আমায় সব ঘুরিয়ে দেখিয়ে, কয়েদীদের লিস্ট বুঝিয়ে, তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে তবে হ্যান্ডওভার কমপ্লিট করলেন। সব কিছু করার সময় সেল নাম্বার ৭০৩ টা শুধু বাদ দিলেন। সেলের সামনে যখন আমরা দু’জনে হাজির হলাম তখন দেখেছিলাম একজন দেওলায়ের দিকে মুখ ফিরে শুয়ে আছে। সেন্ট্রি এসে হাঁকডাক করতে যাচ্ছিলো, কিন্তু পাঁড়েজি তাকে ক্ষান্ত করলেন। যাবার সময় ৭০৩ এর একটা ফাইল আলাদা করে আমার হাতে দিয়ে গেলেন। কিছু অবাক হলেও, বাকি কাজের চাপে আর এটা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি।
নতুন জায়গায় এসে সংসার সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমার গিন্নি। আমিও যোগদান করলাম। বরং বলা উচিত, প্রতিবারের মতো বাধ্য হলাম। ছেলে মেয়েরা সব বালির বাসায় থাকে ঠাকুমার কাছে। সুতরাং গিন্নির সব ফরমাস আমাকেই খাটতে হয়। দরকার হলে কোন এক কনস্টেবলকে বলে দিলেই হয়, কিন্তু আমার ইজ্জতে লাগতো। কর্মক্ষেত্রের বাইরে পার্সোনাল কাজ করানো আমি পছন্দ করিনা।
কিছুদিন গেলো, সব কয়েদিদের ব্যাপার বোঝার চেষ্টা করলাম। আমাদের কাজের অনেক রকম প্রেসার, বুঝলেন তো। এদের কড়া দাবাইও সব সময় দেওয়া যায় না, আবার খেয়াল রাখতে হয় কেউ যেন ভেগে যাবার কথা চিন্তাতেও না আনে। সবার সঙ্গেই দেখা হলো, ৭০৩ ও বাদ গেলো না। কাউকেও দেখে খুব একটা ঘোড়েল বলে মনে হলো না, যে আমায় ফাঁকি দিতে পারবে। বিশ বছরের উপর এই লাইনে আছি। আমি বেকুফ নই।

যত দিন গেলো ৭০৩ সেলের কয়েদিকে নিয়ে আমার উৎসাহ বাড়তে থাকলো। সে কোন কথা বলে না নিজে থেকে। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয়, তবে দু’ একটার বেশি শব্দ খরচ করেনা। সব সময় মাটির দিকে তাকিয়ে কথা বলে। এর মাঝে ২ দিন বসে ফাইলটা শেষ করে ফেলেছি। পাঁড়েজি লোকটার সম্পর্কে অনেক জানকারী জোগাড় করেছিলেন। সেগুলোই লিখে রেখে গেছেন ভবিষ্যতের জেলারের উদ্দেশ্যে। সে অনেক লেখা, বলতে গেলে রাত কাবার হয়ে যাবে। শুনতে শুনতে ঘুম পেয়ে যাবে। আর তাছাড়া পুলিশি সব কথা সিভিলিয়নদের বলা আইনসম্মত নয়। আসল জায়গা গুলো বলি।

খলিলুল্লাহ পেশায় কসাই ছিল শুরুর দিকে। বাপ্ চাচার মুরগির মাংসের দোকান ছিল। দাঁড়ি গজানোর আগেই সেখানে বাপকে সাহায্য করতো সে। তবে এসবের মাঝেও স্কুলের মুখ দেখেছিলো সে। খুব বেশি একটা কিছু নয় যদিও। এরপর খানিক বয়স বাড়লে, সে নিজের একটা দোকান দেয় আর সেখানে ভেড়ার মাংস বিক্রি শুরু করে। নেশা ভাঙ করতো না, মেয়েছেলেরও শখ ছিল না তার। তাই বেশ কিছু টাকাও জমাতে পেরেছিলো। এই ভাবে খানিক দিন চললো। পূর্ণিয়াও বদলাতে শুরু করলো। উন্নতি হতে লাগলো জায়গাটার। সব কিছুর সঙ্গে সঙ্গে জেলেরও উন্নতি হলো। আয়তনে বাড়লো, কয়েদি পেটানোর আখড়ার বদলে সংশোধনাগার হিসেবে তৈরী হতে লাগলো। এখনও যে পুরো বদলাতে পেরেছে তা নয়, আর পারবেই বা কি করে। অত সহজ নয়। যাইহোক, সব বদলের সঙ্গে আরো একটা যে বদল হলো তা ছিল পোস্টমর্টেম রুম। আগে নামেই একটা লাশকাটা ঘর ছিল, কিন্তু সেবার পুরো দস্তুর এক ডাক্তার এলো লাশ পরীক্ষা করার। কিন্তু মুশকিল হলো শুধু ডাক্তারে তো আর হয়না, একটা হেলপার লাগে। আর যে সে হেলপার হলে হবে না, বেশ হিম্মৎওয়ালা হওয়া চাই। ডাক্তারবাবু তো লাশ কেটে ভেতরে সব পরীক্ষা করে চলে যাবেন। তারপর তো সেই লাশ সেলাই করে জোড়া দেওয়া, প্লাস্টিকে মুড়ে তারপর ফ্যামিলি মেম্বারের হাতে তুলে দিতে হয়। তাছাড়া কত রকমের মরা আছে। এক একটার কি বীভৎস অবস্থা হয়। বিষ, জলে ডোবা, একসিডেন্ট, কুপিয়ে খুন, কিছুই তো বাকি থাকে না। আমি নিজেই কতবার লাশ দেখে বাড়ি ফিরে আর খেতে পারিনি সে রাতে। সে অবশ্য চাকরি জীবনের শুরুর দিকের কথা। তা এই রকম একটা জিগরদার লোকের খোঁজ চললো অনেকদিন। কিন্তু কিছুতেই পাওয়া যায়না। অবশেষে ঐ খলিলুল্লাই মুশকিল আসান হয়ে এলো। সে রাজি হলো কাজ করতে। হাজার হোক সরকারি নৌকরি। বাঁধা ইনকাম। খলিলুল্লাহ ঠিক ঠাক কাজ করছিলো। ডাক্তার সাহেবও খুশি। শুধু লাশ জোড়া দেবার সময়ই নয়, সময় বিশেষে লাশ কাটার কাজও করতে শুরু করলো সে। সব চলছিল ভালোই। কিন্তু একদিন সব গড়বড় হয়ে গেলো। পরীক্ষা করে ডাক্তারসাব বেরিয়ে গেছেন। খলিলুল্লাহ লাশ সেলাই করে বডি পার্টিকে দিয়ে দেবে। রাস্তায় খানিক এগিয়ে ডাক্তারসাবের মনে পড়লো কিছু দরকারি কাগজ পোস্টমর্টেমের অফিসে ফেলে চলে এসেছেন। সুতরাং আবার তাঁকে ফিরে যেতে হবে। সাইকেলটা গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে তিনি অফিসঘরে ঢুকলেন, টেবিল, ড্রয়ার খুঁজেও পেলেন না কাগজ গুলো। মনে হলো হয়তো লাশ কাটার ঘরে যে আলমারি আছে সেটাই ভুল করে রেখে দিয়েছেন। খোঁজার জন্য দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকতেই তিনি এক বীভৎস দৃশ্য দেখলেন। রোড একসিডেন্টে মারা যাওয়া যে ছেলেটার পোস্টমর্টেম করে খানিক আগে বেড়িয়েছেন তিনি, সেই বডিটা এখনো টেবিলে পরে আছে। খলিলুল্লাহ তার বুকের উপর ঝুঁকে রক্ত মাখা হাতে তার শরীর থেকে একদলা মাংস তুলে এনে নিজের মুখে পুরে চিবোতে শুরু করলো। দেখে মনে হচ্ছে সে লাইক আগে থেকেই কাজটা শুরু করেছে। ডাক্তারি চোখে তিনি ধরতে পারলেন, খলিলুল্লাহ মাংস নয় ছেলেটার কলিজা তুলে খাচ্ছে। ডাক্তারসাবের পায়ের আওয়াজে খলিলুল্লাহ ফায়ার তাকাতেই তার রক্তমাখা মুখ দেখা গেলো। কোন মতে ঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে বাইরে থেকে হ্যাচবোল্ট টেনে দেন তিনি। ভেতরে খলিলুল্লাহ দরজা ধরে ধাক্কা দিতে থাকে যেন ভেঙে বেরিয়ে আসবে। ডাক্তারসাব বাইরে এসে হাঁকডাক করে লোক জড়ো করেন আর নিজে সাইকেল নিয়ে চলে যান থানায়। পুলিশ গিয়ে খলিলুল্লাহকে যখন ধরে আনে, তখন তার তার সারা গায়ে রক্ত। মুখের চারপাশেও তাই। তাকে দেখার জন্য বাইরে তখন ভিড় জমে গেছে।
এরপর সে জেরায় সব কথা স্বীকার করে। এটাই তার প্রথম বার নয়। এর আগেও সে মড়া মানুষের কলিজা তুলে খেয়েছে বলে মেনে নেয়। এবং আরো জানতে পারা যায়, তার এই অভ্যাস ভেড়ার মাংস বিক্রি করার সময় থেকেই। তাকে প্রথমে কিছু দিন জেলে রাখা হয়। তারপর আদালতের নিৰ্দেশে সরকারি মানসিক হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসা চলে। সেখান থেকে ছাড়া পেলে আবার জেলে নিয়ে আসা হয়।
আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি জানার সে কিভাবে এমন জঘন্য রুচির কাজ শুরু করলো, সে তার উত্তরে কিছুই বলতো না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতো। তবে তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে জল বয়ে যেতে দেখেছি। সেটা তার অনুশোচনা বলেই ধরে নিতাম আমি। কারণ এর চেয়ে বেশি আর কিছু জানা সম্ভব হয়নি। আমি থাকাকালিনই সে মারা যায় জেলখানায়। ন্যাচারাল ডেথ। তবে পোস্টমর্টেম করা হয়েছিল।

————

“এই হলো মহিতোষবাবুর গল্প। এটাকেই এবারের আর্টিকলে দেব ভাবছি। আর এর সঙ্গে আরো অন্যান্য ঘটনা থাকবে কিছু।”

খানিক্ষন চুপ থাকার পর শ্যামদা প্রথম নীরবতা ভাঙলো। “এতো ক্যানিবলিজমের গপ্প রে। এসব সত্যিই হয়!” কোনো জবাব দেবার আগেই শ্যামদা উঠে ক্লাবের টয়লেটের দিকে চলে গেল।

এমন সময় বাইরের দরজা খুলে তোতন আর নিমু হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকলো।
“তোমরা এখানে বসে আছো? আর ওদিকে সবাই অনুপদাকে খুঁজছে। শ্যামদার একসিডেন্ট হয়েছে অফিস থেকে ফেরার পথে। পাশের দোকানের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেছিল। সেখানে ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছে। এখন পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তোমরা শিগগির এস।” এক নিঃশ্বাসে বলেই নিমু আবার দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। সঙ্গে তোতনও তার পিছু নিলো।

আমরা একে ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করছি তখন। দেখলাম রণজয়ের মুখ ফ্যাকাশে। অনুপদা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। নিজের মুখের অবস্থা দেখা হয়নি। কিন্তু নিজের হার্টবিট নিজেই শুনতে পারছিলাম।
এমন সময় টয়লেটের ফ্লাস টানার আওয়াজ এলো, আর নজর গেল টেলিবে রাখা শ্যামদার নস্যির ডিবে আর রুমালে।

লেখক: শান্তনু দাশ

ছবি: www.addictionresource.com

অলংকরণ: আনাড়ি মাইন্ডস