হিস্ট্রির মিস্ট্রি- ৯ / যে মানুষের হাত দুটো ছিল ভগবানের তৈরি- ২

Anirban & Arijit, বাংলা, হিস্ট্রির মিস্ট্রি

“ইজরায়েলের রাজা সলের সাথে ফিলিস্তিনদের যুদ্ধ চলছে, চল্লিশ দিন ধরে, দিনে দু’বার। একদিন ফিলিস্তিনদের সেরা যোদ্ধা গোলিয়াথ ইজরায়েলের শ্রেষ্ঠ বীরের সাথে একক যুদ্ধের আহ্বান করে। সবাই যখন ভয়ে পিছিয়ে আসছে তখন সামান্য মেষপালক ডেভিড এগিয়ে আসে। ডেভিড সেই অসম যুদ্ধে হারিয়ে দেয় গোলিয়াথকে।”

ওল্ড টেস্টামেন্ট, ১ স্যামুয়েল ১৭:৩৪-৪৯

 

।।

 

১৪৯২, ব্যাসিলিকা দি সান স্পিরিতো, ফ্লোরেন্স

রাত এখন প্রায় তিনটে, ফ্লোরেন্স শহর এখন ঘুমোচ্ছে। এদিকে ওদিকের আস্তাবল থেকে ভেসে আসা হ্রেষা ধ্বনি ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই বললেই চলে। শুধু একজনের চোখেই ঘুম নেই।

সান স্পিরিতোর লাগোয়া যে হাসপাতালটা আছে, তারই একটা কোণে ছোট্ট মর্গটা। একটা মাত্র ঘর মাটির ওপরে, হাসপাতাল থেকে আসা বেওয়ারিশ মৃতদেহ জমা হয় সেখানে, একসময় কেউ দাবী না করলে তাদের সমাধি দেওয়া হয় শহরের কবরখানায়।

মর্গের ঘরটার নিচেই মাটির তলায় আরেকটা ঘর, স্যাঁতস্যাঁতে, আলো বাতাস তেমন ভাল ঢোকে না সেখানে। এখন সেই ঘরেই একটা আলো জ্বলছে। আসছে একটা মোমবাতি থেকে। ঘরের মাঝে রাখা একটা লম্বা টেবিল। টেবিলের ওপরটা একটু অবতল আর নিচের দিকে ঢালু। টেবিলের এক প্রান্তে মেঝের ওপরে রাখা একটা বালতি, তাতে এক ফোঁটা এক ফোঁটা করে কালো হয়ে যাওয়া রক্ত গড়িয়ে পরছে।

টেবিলের ওপরেই শোয়ানো আছে যে মৃতদেহটা তার থেকেই আসছে সরু রক্তের ধারা। গলার নিচ থেকে কোটিদেশ অবধি লম্বালম্বি ভাবে চেরা। ভিতরের অন্ত্র বার করে নেওয়া হয়েছে। ফাঁকা পেটের মধ্যেই সোজা করে বসানো আছে মোমবাতিটা। আর তার আলোয় এক নিবিষ্টে কাজ করে চলেছে এক যুবক। হাতে একটা ছোট ফরসেপ আর ধারালো ছুরি, চলছে দেহের ডান হাতের ব্যবচ্ছেদ। যুবকের চোখে একরাশ আগ্রহ। রাত জাগা ক্লান্তির ছিটে ফোঁটা নেই সেখানে।

মানুষের শরীরই এই পৃথিবীর সেরা শিল্প। ভগবানই শ্রেষ্ঠ শিল্পী। কি দারুন ভাবে তৈরি করেছেন এই শরীরকে। প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিজেরদের সাথে জড়িয়ে আছে। এক সুরে লয়ে চলে এরা। প্রতিটা মাংসপেশি যেন কত যত্ন নিয়ে তৈরি। সবাই একসাথে কাজ করছে। তাদের খাবার যোগান দিচ্ছে সরু সরু রক্ত-বাহিকা গুলো। এই যেমন বুড়ো আঙুলটাকে বাইরের দিকে বার করলেই কবজির কাছটায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে দুটো পেশি। এরা না থাকলে তো বুড়ো আঙুলটা নাড়ানোই যেত না, একটা হাতের তালুতেই এদের সংখ্যা প্রায় তিরিশ! সেখান থেকে কবজি, কবজি থেকে কাঁধ, কাঁধের কাছ থেকে বুক আর গলা.. সব জায়গায় কেমন গুনে গুনে রাখা আছে এদের, সবার আলাদা আলাদা কাজ। অথচ সবাই একসাথে কাজ না করলে হাতটাই নাড়ানো যেত না আর।

যুবক একমনে কাজ করতে করতে ভাবে এসব। পাশে রাখা পাতায় আঁকে একটু একটু করে। এগুলোই ওর সম্পদ। গোঁড়া খ্রীষ্ট ধর্মে মৃত মানুষের শরীর কাটা ছেঁড়া করা চরম অপরাধ। ভাগ্যিস এই চার্চের প্রায়র ওর বন্ধু! তাই তো রাতের অন্ধকারে চুপিসারে এই মাটির তলার ঘরটাতে নেমে আসতে পারে ও, ওর সকালটা তো কেটে যায় অ্যাকাদেমিতেই। আর এই কাজ রাতের অন্ধকারেই করা ভাল, বাকিদের নজর এড়িয়ে। এই আলো আঁধারি ঘরেই একটু একটু করে মেটায় ওর মনের ক্ষুধা। তার বদলে যদিও ও চার্চকে একটা কাঠের যীশুর মূর্তি বানিয়ে দিয়েছে। প্রায়র বন্ধুটি এতেই খুশি।

আচ্ছা, ও নিজে কি পারে না এমন একটা মানব শরীর বানাতে? না হয় ও ভগবান নয়, কিন্তু পাথর কেটে কি এমন মানুষ বানানো যাবে না যার তুলনা হবে রক্ত মাংসের মানুষের সাথে? শুধু তাতে প্রাণটাই যা থাকবে না, পারবে কি ও আদৌ এমন কিছু একটা সৃষ্টি করতে?

কিন্তু সেই মূর্তি খুব ছোট হলে চলবে না। ছেনি বাটালি দিয়ে খোদাই করে যদি এই টেবিলে শুয়ে থাকা মৃতদেহের সূক্ষ্মতা আনতে হয় তাহলে সেই মার্বেল পাথরের আকারও বেশ বড় হতে হবে। কিন্তু ওত বড় পাথর ও পাবে কোথা থেকে? মার্বেল খুব দামী একটা বস্তু, আর ও নিজে তো কপর্দকশূন্য।

এমন সাত পাঁচ ভাবনার তার কাটল হটাৎ চার্চের বেলের আওয়াজে। ভোর ছটা বাজল। বাইরে একটু একটু করে আলো ফুটছে এবারে। এহে, দেখছ! আজও এই কাজের ঘোরে সারাদিন কিছু খেতেই ভুলে গেল ও।

মিকেলঅ্যাঞ্জেলো যখন এমনটা ভাবছে তখন ওর বয়স মাত্র সতেরো। ওর এই স্বপ্ন সত্যি হতে লেগেছিল আরো দশ বছর।

 

।।

 

১৬ই অগাস্ট, ১৫০১, ফ্লোরেন্স

 

-আপনিই মিকেল অ্যাঞ্জেলো?

-হ্যাঁ, মিকেল অ্যাঞ্জেলো বুয়োনারত্তি।

-আপনিই ভ্যাটিকানের পিয়েতাটা বানিয়ে ছিলেন?!

সামনে দাঁড়ানো ২৬ বছরের এই যুবকই যে ইতালিতে সাড়া ফেলে দেওয়া এমন একটা কাজ করেছে তা বিশ্বাসই হচ্ছে না কোসিমো দি অ্যান্তোনিয়র। কোসিমো ওপেরা দেল ডুয়োমোর শীর্ষকর্তা। এই ওপেরার কাজ হল ফ্লোরেন্সের চার্চ গুলোর সংস্করন করা।

-শুনলাম আপনি নাকি জায়ান্ট-টা নিয়ে কিছু বানাতে চান?

ওপেরার ওয়ার্কশপে আজ প্রায় চল্লিশ বছর হল একটা আঠেরো ফুট লম্বা ছ ফুট চওড়া মার্বেল পাথর পড়ে আছে। আনা হয়েছিল কারারার খনি থেকে। এই বিশাল পাথরের চাঁইকেই স্থানীয় লোকেরা আজকে জায়ান্ট বলে জানে।

-হ্যাঁ, আপনাদের এখানে তো এমনিই পড়ে আছে ওটা, কেউ হাত দেয় না।

হাত দেয় না বললে ভুল হবে, চেষ্টা বেশ কয়েকজন করেছে, কিন্তু ওই পাথরে নাকি অনেক খুঁত, ভাল কিছু বানানো যাবে না ও দিয়ে।

-আচ্ছা, আমাকে যদি সুযোগ দেন তাহলে আমিও একবার চেষ্টা টা করে দেখতে পারি।

-বেশ, তা না হয় দেওয়া যাবে, কিন্তু কি বানাতে হবে সেটা কি জানেন?

– জানি,

ডেভিড।

 

।।

 

১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৫০১

সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটছে ফ্লোরেন্সের আকাশে তখন। মিকেল এখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন সান্তা মারিয়া দেল ফিওরে ক্যাথেড্রালের পাশেই ওর জন্য বানানো ওয়ার্ক-শপটাতে। মাথার ওপরে কাঠের ছাউনি। মিকেলের সামনে দাঁড় করানো জায়ান্ট, সেই বিশাল পাথরের টুকরোটা। নাহ, আগের দুজন শিল্পী যারা এই পাথরে হাত দিয়েছিলেন তারা খুব ভুল কিছু বলেননি। অনেক খুঁত সত্যি পাথরটাতে, ছোট ছোট চিড় ধরেছে এখানে সেখানে। এই চল্লিশ বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নোংরাও হয়েছে অনেক। এক বার স্পর্শ করে দেখলেন, মার্বেলের ঠান্ডা অনুভুতিটা হাত ছুঁল। পারবেন? পারবেন কি মিকেল? পারতে তো তাকে হবেই। নিজের জমিয়ে রাখা স্বপ্নটা সত্যি করতেই হবে।

মিকেল অনেকক্ষন একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলেন এতোদিন অনাদরে পড়ে থাকা জড়বস্তুটার দিকে। একটু একটু করে একটা অবয়ব ধরা দিল ওর চোখে, ডেভিড লুকিয়ে আছে পাথরের মধ্যেই! শুধু ওপরের আস্তরণটা সরিয়ে দিলেই হল।

প্রথমে মোম দিয়ে বানালেন একটা ছোট মূর্তি, তারপরে তা দেখে একটু একটু করে চলতে থাকল ছেনি হাতুড়ির কাজ। ওয়ার্কশপে মিকেল ছাড়া আর কারোর প্রবেশ নিষেধ। সারাদিন ওর ওখানেই কাটে। খাওয়া দাওয়ারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই এখন, রাতে ঘুমোচ্ছেনও ওই পাথরের নিচেই, জামা জুতো পরেই।

সান স্পিরিতোর রাতগুলো যা কিছু শিখিয়েছিল তাকে সবটুকু এবারে উজাড় করে দিতে থাকলেন মিকেল। শুরু হল তার ঈশ্বরকে স্পর্শ করার লড়াই।

।।

১০ই জানুয়ারি, ১৫০৪

হাতে গোনা জনা পাঁচজন আজকে এসেছেন মিকেলের ওয়ার্কশপে। মিকেলই ডেকে নিয়ে এসেছেন এদের। আমন্ত্রিতদের মধ্যে কোসিমো ছাড়াও আছেন ওপেরার ওপরের দিকের দুজন সদস্য, আর আছেন পিয়ের সোদেরিনি। ফ্লোরেন্সের রিপাবলিকের মাথা তিনি এখন। শহরের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এখন এঁর হাতে।

ডেভিড বানানোর কাজ সম্পূর্ণ। তাই তার প্রথম ঝলকটা দেখতেই আসা এদের। কোসিমো মনে মনে ভাবছেন ওই বাজে পাথরের টুকরোটা থেকে খুব বেশি ভাল কিছু আশা করা যাবে না। তবে মূর্তিটা তো বসবে ফ্লোরেন্স ক্যাথিড্রালের সেই উঁচু ছাদের কার্নিশে। মাটি থেকে অনেক ছোট লাগবে। খুঁত গুলোর কারোরই চোখে পড়বে না। যাই হোক, পাথরটার একটা হিল্লে তো করা গেছে।

কিন্তু কয়েক মিনিটের মধ্যেই কোসিমোর ভাবনা আমূল বদলে গেল। যখন ডেভিডের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে নিলেন মিকেল।

এ কি দেখছেন কোসিমো? এতো কোন মূর্তি নয়। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ১৭ ফুটের জলজ্যান্ত দৈত্যকার এক মানুষ! ডেভিড দাঁড়িয়ে রয়েছে তার ডান পায়ের ওপরে ভর দিয়ে। বাঁ পা টা সামনের দিকে এগোনো। ডান হাতে ধরা এক খন্ড পাথর, বাঁ হাত ভাঁজ করে রাখা বাঁ কাঁধের কাছে, তাতে ধরা আছে গুলতি। ডেভিডের মুখ শশ্রু-গুম্ফবিহীন, চোয়াল শক্ত। একদৃষ্টে সে যেন তাকিয়ে আছে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গোলিয়াথের দিকে। দুই চোখের মাঝে কপালে ভাঁজ পড়েছে। পিউপিল গুলো বড় হয়ে আছে। ফুলে উঠেছে নাকের পাটা। মুখে ঝলসে উঠছে একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাস।

আর বাকি শরীর? তা এমনই নিখুঁত যে মনে হবে সাদা মার্বেলে একটু দাগ টানলেই এই হয়তো বেড়িয়ে আসবে রক্তের ধারা, এই হয়ত দেখা যাবে নিঃশ্বাসের সাথে বুকের ওঠানামা। শরীরের প্রতিটা মাংশপেশি তার নিজের নিজের জায়গায় বসে আছে। শক্ত পাথর কেটে বেড়িয়ে এসেছে তার পেলব অবয়ব। ডান হাতের ছোট ছোট পেশি গুলোও স্পষ্ট, হাতের শিরা গুলোও ফুলে উঠেছে। যেন রক্ত চলাচল করছে তার মধ্যে দিয়ে।

ডেভিডকে দেখে পাঁচ জনই তখন বিস্ময়ে আবিষ্ট, কারোর মুখে ভাষা নেই। এমন কিছু কোন মানুষ বানাতে পারে?!

ঘরের নীরবতা ভেঙে প্রথম কথাটা এলো ওদের পিছন থেকে, বললেন মিকেলঅ্যাঞ্জেলো নিজেই,

– আপনাদের কি এখনও মনে হয় একে ক্যাথিড্রালের ছাদে তুলে দেওয়া উচিৎ?

 

।।

 

২৫শে জানুয়ারী, ১৫০৪

ওপেরা দেল ডুয়োমোর অফিসে আজকে খুব ভীড়। শহরের তাবড় তাবড় ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আজকে সভা বসেছে। কে নেই সেখানে? লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, ফিলিপো লিপ্পি, স্যান্দ্রো বত্তিচেল্লি। সবাইকে আজকে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।

ডেভিডকে ফ্লোরেন্সের কোথায় রাখা হবে?

মিকেলের ওয়ার্কশপে ডেভিডকে দেখেই কারোর এটা বুঝতে বাকি ছিল না যে এই আশ্চর্যকে ক্যাথিড্রালের মাথায় তুলে দেওয়াটা নিতান্তই বোকামোর কাজ হবে। তাহলে আর কোথায় রাখা যায়। অনেক আলোচনা বাক বিতন্ডার শেষে মোটামুটি তিনটে জায়গা ঠিক হল, ডুয়োমোর বাইরেটাতে, অথবা লগিয়া দেই লাঞ্জির বারান্দায় বা ফ্লোরেন্সের প্রাণকেন্দ্র পিয়াজা দেলা সিগনোরিয়াতে।

-শিল্পীর মতও একবার নেওয়া দরকার, আপনি কি মনে করেন?

বললেন ফ্র‍্যাঞ্চেস্কো ফিলারেত, ফ্লোরেন্সের সিগনোরির চিফ, যিনি আজকের সভাটা ডেকেছেন।

আঠাশ বছরের মিকেল ঘরের এক কোণে এতক্ষণ ধরে বসে নিজের ড্রয়িং বইয়ে স্কেচ করছিল। এবারে ফিলারেতের কথায় মুখ তুলে বলল,

– ডেভিডকে পিয়াজা দেলা সিগনোরিয়াতেই বসানো হোক। পালাজো ভেচ্চিওর বাইরে ডানদিকটাতে। ডেভিডের মুখ থাকবে দক্ষিণে, রোমের দিকে। রোমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ডেভিড দাঁড়িয়ে থাকবে ফ্লোরেন্সের রিপাবলিকের প্রতীক হয়ে।

মিকেলঅ্যাঞ্জেলোর কথা কেউ ফেলতে পারেনি।

 

।।

 

৮ই জুন, ১৫০৪

১৪ই মে থেকে শুরু করে ১৮ই মে অবধি পাঁচদিন চল্লিশ জন মানুষ ডেভিডকে একটু একটু করে সান্তা মারিয়ার ক্যাথিড্রাল থেকে নিয়ে এসেছিল পিয়াজা দেল সিগনোরিয়াতে। রাস্তার দু পাশে কাঠের পাটাতন বসিয়ে তার ওপরে রোলার লাগিয়ে। আনার পরে মিকেল টুকটাক শেষের কাজ সারেন ডেভিডের ওপরে। আর আজকে ডেভিডকে তুলে দেওয়া হল ফ্লোরেন্সের সাধারণ মানুষের জন্য।

ফ্লোরেন্সের গর্ব ডেভিড পিয়াজাতেই মাথা উঁচু করে ছিল আরো প্রায় সাড়ে তিনশো বছর। তবে রোদ,ঝড়, তুষারপাতে মূর্তিটা একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছিল তাই তাকে সরিয়ে আনা হয় গ্যালারিয়া দেল অ্যাকাদেমিয়াতে। তার মাত্র তিন বছর আগেই রোমও চলে এসেছে ইতালিয়ান স্টেটের মধ্যে। দেশের রাজধানী তখন। তাই অ্যাকাদেমিয়াতে ডেভিডের মুখ দক্ষিন থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হল। নিতান্তই রাজনৈতিক কারণে। ১৯১০ সালে সিগনোরিয়াতে একটা নকল ডেভিডকে রাখা হয়, সেটা এখনো আছে।

মিকেল অ্যাঞ্জেলোর বানানো ডেভিডকে এখনো অ্যাকাদেমিয়াতেই দেখতে পাওয়া যাবে। সেখানে ডেভিড ছাড়া আর কিচ্ছু দেখার নেই। মিকেলের কিছু অসমাপ্ত কাজ রাখা আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। টিকিটের দাম প্রায় ২০০০ টাকা, তাও শুধু মাত্র ডেভিডকে দেখতে অ্যাকাদেমির বাইরে সকাল থেকে লম্বা লাইন পড়ে যায়। সবাই একঝলকের জন্য হলেও দেখতে চায় মিকেলের সৃষ্টিকে।

একজন মানুষের ঈশ্বর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছয়শো বছর আগে পূরণ হয়েছিল। রূপকথার মতো শোনালেও এই গল্পটা সত্যি।

 

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

 

লেখক- অনির্বাণ ঘোষ

 

2 comments

  • Liked this topic and the write up too good.. I can relate this very much…Saw David in April … it’s a magic.. thanks .. interesting series…

Comments are closed.