ভূত আমার পূত – গল্প ৫ – লন্ডনে গণ্ডগোল

Anirban & Arijit, Series, Story, Supernatural, বাংলা, ভূত আমার পূত

(আমার সত্যিকারের ভয় পাওয়া অবলম্বনে)

ভেবেছিলাম সিরিজ টা শেষ করে দিলে হয়তো তেনাদের হাত থেকে রক্ষে পেয়ে যাব। কিন্তু অদৃষ্টের মার, আর সাথে আপনাদের প্রার্থনার জেরে আমি আবার ভয় পেলুম আর ফিরে আসতে হল সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে। “ফরাসি হোটেল”-এর পর খুব আশায় ছিলাম যে বিদেশে আর এসবের মুখোমুখি হতে হবে না। কিন্তু লন্ডন আমায় খালি হাতে ফেরালো না। আসলে মনে হয় ভীতু লোকেদের সাথেই এই ব্যাপারগুলো ঘটে থাকে বারবার।

এই অভিজ্ঞতা পড়তে ভালো লাগুক বা না লাগুক, অনুরোধ করব যে শেষ টা মিস করবেন না। নাহলে, গল্পের আসল ফ্যাক্ট জানা থেকে বঞ্চিত রয়ে যাবেন। ভয় পাওয়া বা না পাওয়া ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক। আমি তো আরশোলাকেও ভয় পাই, ধর্মের চোখরাঙানি কেও ভয় পাই। কিন্তু এগুলো পরোয়া করি না খুব একটা। তবে, এই অপ্রাকৃত ঘটনায় কারণ খুঁজে পাইনা বলে ভয়ের মাত্রা আরও বেড়ে যায়, আর সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায় যেহেতু ঘটনাস্থলে নিজেই উপস্থিত থাকি।

যাজ্ঞে, জ্ঞানের পালা শেষ, শুরু করলাম আজকের গল্প, “লন্ডনে গণ্ডগোল”।

||

এই শহরটার প্রেমে পড়তে না দুমিনিটও লাগে না। আসলে কোথাও যেন কলকাতার সাথে এই শহরের একটা যোগসূত্র আছে। মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা গঙ্গারূপী থেমস, তার দুই ধারের মনোরম পরিবেশ, সকাল থেকে শুরু হওয়া ব্যস্ততা, সন্ধের আদর ছড়িয়ে পড়া ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো বাড়িগুলোর মাথায়, সবমিলিয়ে একটা উন্নতমানের কলকাতা মনে হয় আমার এই লন্ডনকে।

কাজের সূত্রে এলেও কোম্পানি এবারে হোটেল বা অ্যাপার্টমেন্ট দেবে না আগেই বলে দিয়েছিল, নিজের গ্যাঁটের কড়ি খসিয়েই থাকতে হবে। কাজেই বন্ধু অনির্বাণের (ডাক্তারবাবুর হিস্ট্রির মিস্ট্রি আর স্ক্যালপেল পড়ে থাকলে চিনবেন নিশ্চয়) বাড়ি প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ থেকে নিয়েই লেগে পড়তে হল অফিসের কাছাকাছি থাকবার মতো একটা উপযুক্ত জায়গা খুঁজতে। অনেক রকম উপায়ে এখানে ভাড়াবাড়ি খোঁজা যায়। নিজে গিয়ে গিয়ে বারবার দেখতেও হয়। তাই দিনের শেষে অফিসের পর এইভাবে ৩-৪ টে বাড়ি দেখার পর মনে ধরল নর্থ লন্ডনের একটা বাড়ি। জায়গাটার নাম ফিন্সবুরি পার্ক, বিখ্যাত ক্লাব আর্সেনাল এর স্টেডিয়াম এখানেই।

দেখাশোনা, এগ্রিমেন্ট, ডিপোজিট এইসবের শেষে এক শনিবার বিকেলে লটবহর নিয়ে হাজির হলাম আমার নতুন বাসস্থানের সামনে। পাক্কা ব্রিটিশ ধাঁচে তৈরি পুরনো আমলের দোতলা বাড়ি, দেখেই মনে হয় কয়েকবছর আগে রিমডেলিং করা হয়েছে। বয়স্ক মালিক গ্রাহাম থাকেন একতলায়, আর আমার থাকবার ব্যবস্থা দোতলায়।

ঘরদোর খুব শৌখিন, কিন্তু ফার্নিচার সবই মান্ধাতার আমলের। অথচ তাদের হাল কিন্তু এখনও বেশ শক্তপোক্ত আর চকচকে। দুখানা ঘর দোতলায়, একটাতে পালঙ্কের ন্যায় মস্ত খাট, দেওয়ালে মনোরম কিছু পেন্টিং। ব্যালকনি নেই, কিন্তু তার বদলে আছে বিশাল এক জানলা, যা খুলে দিলে আপনি অনয়াসে হেঁটে লাফিয়ে পড়তে পারেন নিচের ঘাসে। এইসব দেখলেই আমার কেন জানি না হরর ফিল্মের সিন গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। “উওম্যান ইন ব্ল্যাক” সিনেমার প্রথম সিনেই দুটো বাচ্চা এইরকমই একটা জানলা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল। তাই স্বভাবতই এই জানলা আমাকে অবচেতনভাবে ভোগাবে বুঝতে পারলুম।

আগেও কোনও একটা গল্পে বলেছিলাম মনে হয়, যে এই দেশে সবাই ঘরে টিমটিমে বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে পছন্দ করে। টিউব তো ছেড়েই দিন, যেকোন রকমের জোরালো আলো এদের নাপসন্দ। এই আলো আঁধারি পরিবেশে আমি কেমন একটা বিষণ্ণ হয়ে যাই। এইজন্য নরওয়ে তে যখন ৬ মাস রাত থাকে, তখন সরকার থেকে নির্দেশ দিয়ে মদের বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ মদ খেয়ে ডিপ্রেশনে লোকজনের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। যাই হোক, অ্যালকোহল আমি ছুঁই না এ কথা বললে পাপ হবে। বরং ওর ভালো ভালো গুণের কথা মাথায় রেখে আমি এই বস্তুটিকে এক্সপ্লোর করার চেষ্টা করি, জানার চেষ্টা করি, কোনদিন লিখবও হয়তো।

দরজা খুলেই লম্বা সিঁড়ি উঠে এসেছে এই দোতলায়। সিঁড়ির দেওয়ালে গ্রাহামের কিছু কিছু রিলেটিভের ছবি ফ্রেমে বাঁধানো, সিঁড়ি যেখানে শেষ হচ্ছে দোতলায়, সেখানে একটা ঝাড়বাতি। এদের বাড়িতে সাধারণত ছাদ থাকে না, তার বদলে থাকে ব্যাকইয়ার্ড, মানে বাড়ির পেছনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। মালিক নিচে থাকে, তাই ব্যাকইয়ার্ড টা ওনারই সম্পত্তি। আজ আসতে দেরি হয়ে গেছে বলে গ্রাহামের সাথে ঠিকঠাক আলাপ জমানো গেল না। উইকেন্ডে চেষ্টা করা যাবে।

এখন লন্ডনে শীতের দাপট চলছে বলে বেশ তাড়াতাড়িই অন্ধকার হয়ে যায় সন্ধেবেলা। নয়তো গরমকালে এদের রাত ১০ টা অবধি সূয্যিমামার ডান্স দেখা যায়। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখলাম পাড়া টা ঘুটঘুট করছে অন্ধকার, আর বাড়িগুলোতে ঐ একই টিমটিমে আলো। নতুন বাড়ি তে এলে আমার মনে এখন একটা কুসংস্কার খুব কাজ করছে দেখছি ইদানীং কয়েক মাস। এর আগে যখন লন্ডন এসেছিলাম, তখন একটা বাড়িতে শেয়ার করে থাকতাম একজন মাড়োয়ারি কলিগের সাথে, দুজনের আলাদা ঘর। তা সেই বাড়িতে প্রত্যেকদিন সকালে উঠেই আমার অসহ্য মাথা যন্ত্রণা করত, আর সেটা থাকত বেলা অবধি। কিছুতেই কারণ বুঝতে পারতাম না, ঠান্ডা লেগে সর্দিকাশি জ্বরজ্বালাও নেই। তারপর একটা টোটকা দিল আমার সেই ফ্ল্যাটমেট কয়েক সপ্তাহ পর।

আমার ঘরে এসে আমার মোবাইল টা চাইল। তারপর কম্পাস অ্যাপ অন করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে কি যেন দেখল। তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করল, খাটে কোনদিকে মাথা করে শুই। দেখালাম ওকে আঙুল দিয়ে। মুচকি হেসে বলল, “বিশ্বাস নাও করতে পারো, তবে একবার ট্রাই করে দেখতে পারো অন্য যেকোন দিকে মাথা দিয়ে কয়েকদিন শুয়ে। উত্তরদিকে মাথা দিয়ে শুতে নেই। আমাদের কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরদিকে মাথা করে শোয়ানো হয়।” কথা শুনে বিশ্বাস তো হল না, তবে অবাক করে দিয়ে পরের দিন থেকেই অন্যদিকে মাথা রেখে শুয়ে আমার মাথা ব্যথা জাস্ট হাওয়া হয়ে গেল। তাই ঠেকে শিখেছি বলে এখন নতুন বাড়ি তে ঢুকলেই কৌতুহলবশত একবার নর্থ টা দেখে নি। একে কুসংস্কার বলতে পারেন, আবার কিছুটা ভয়ও।

তো যাই হোক, বই নিয়ে শুলাম। রাত একটু গভীর না হলে আমার ঘুম আসে না। “নবীগঞ্জের দৈত্য” বেশ জমে উঠেছে। এমন সময় মনে হল বাইরের আর বাথরুমের লাইট নেভানো হয়নি। মালিক দেখতে পেলে খ্যাঁকখ্যাঁক করতে পারে। দরজা খুলেই দেখি সব অন্ধকার। ঘুটঘুটে পাতালপুরী মনে হচ্ছে সিঁড়ি থেকে নিচেটাও। গ্রাহাম কি এসে লাইট নিভিয়ে দিয়ে গেল নাকি। বেশি মাথা না খাটিয়ে শুয়ে পড়লাম।

||

ভালোই ঘুম হল নতুন জায়গায়। আমার এই একটা ভালো গুণ, যেকোন জায়গায় শুয়ে ঘুমিয়ে নিতে পারি। আজ সোমবার, তাই অফিসও শুরু। নাকেমুখে একটু গুঁজে অফিস বেরনোর সময় দেখা হল গ্রাহামের সাথে। খুব নিরীহ মানুষ, দেখলে নিজের দাদুর কথা মনে পড়ে যায়। আমাকে বলল সামনের শনিবার সন্ধেবেলা ওনার ঘরে আসতে, নেমন্তন্ন। মনটা ভরে গেল, এই প্রথম একজন ভালো মালিক পেলাম।

অফিসে দিন ভালোই কাটল। ফিরে এসে বাড়ি ঢুকতে যাব, বাইরে থেকে দেখি আমার ঘরের সেই সিংহজানলা হাট করে খোলা। দেখেই মাথা গরম হয়ে গেল। দরজা খুলে গ্রাহামের ঘরে নক করলাম। গ্রাহাম বেরোতেই জিজ্ঞেস করলাম খুব ভদ্রভাবেই যে ওপরে আমার অনুপস্থিতিতে কেউ যায় কিনা। গ্রাহাম জানাল তার পক্ষে সিঁড়ি চড়াই অসম্ভব, আর কাজের লোক দুসপ্তাহে একবার আসে, আর এখন সে ছুটিতে। আমি আর কিছু না বলে ওপরে চলে এলাম। জিনিসপত্র সব ঠিকঠাক। জানলা বন্ধ করলাম টেনেটুনে। আজ শুতে যাওয়ার সময় ইচ্ছে করে বাইরের আলো জ্বালিয়ে রাখলাম, কেন জানি না মনে শখ হল যে পরে বেরিয়ে দেখব সত্যিই আলো বন্ধ হচ্ছে কিনা আবার। শুয়ে পড়লাম ঘরের দরজা বন্ধ করে।

হতচ্ছাড়া ঘুম ভাঙলো সকালে। তাও দেরি করে। পড়িমরি করে উঠে ছুটলাম অফিস। পরে মনে পড়ল খেয়ালই তো করা হল না যে বাইরের লাইট জ্বলছিল কিনা। তবে আজ আর বাড়ি ফিরে সেই বড় জানলা খোলা পাইনি। কিন্তু ওপরে উঠে যেটা দেখলাম সেটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না।
সিংহজানালা টা বাদে দুটো ঘর বাথরুম আর কিচেনের সমস্ত জানলা আর দরজা খোলা, যেগুলো সবকটাই সকাল অবধি বন্ধ ছিল। ভয়ডর এখন একটু কমেই গেছে ভূতের গল্প লিখে লিখে। তাই আরামসে সব দরজা জানলা বন্ধ করলাম। আর মনে মনে গ্রাহামের সাথে সাক্ষাতের জন্য মুখিয়ে রইলাম। কারণ ফরাসি হোটেলে যে ব্যাখ্যা জানতে পারিনি শেষপর্যন্ত, সেরকম এখানে কিছু মিস করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই।

আমার শোওয়ার ঘরের পাশের ঘরটা খালিই পড়ে থাকে। আমি ব্যবহার করতেই পারি, কিন্তু একা মানুষ কতগুলো ঘরে দাপিয়ে বেড়াতে পারে! তবে এই ঘরের জানলা দিয়ে ব্যাকইয়ার্ড টা পুরো দেখা যায়। বাড়ির পেছনদিকে ঘন জঙ্গল। সন্ধেবেলা আলো আঁধারিতে দেখতে বেশ মনোরম কিন্তু গা ছমছমে লাগে। বাড়ির পেছন দিক দিয়ে ঐ জঙ্গলে যাওয়ার একটা রাস্তা আছে। সকালবেলা একদিন সেই রাস্তা দিয়ে শর্টকাটে অফিস গেছিলাম, জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে একচিলতে হাঁটার রাস্তা। তবে সন্ধেবেলা ফেরবার সময় হেব্বি ফাটলো। বাঘ ভাল্লুকের ভয় নয়, এ ভয় অন্য, এ ভয় এক অজানা কিছুকে প্রত্যাশা করে। ফিরে এসে মনে হয়েছিল আর ওই রাস্তা দিয়ে যাবো না। এই পাশের ঘরের দেওয়ালে অনেক পেন্টিং। একটা ছোট শেল্ফে যীশুর মূর্তি। পেন্টিং গুলোর মানে বুঝি না, কিন্তু দেখতে ভালোই লাগে।

||

এসে গেল শনিবার। অফিসের পাশের টেসকো থেকে একটা ইটালিয়ান প্রসেকো ওয়াইন কিনে নিয়েছিলাম আগেই গ্রাহাম কে দেবো বলে। সন্ধেবেলা নামলাম একতলায়। খুব আপ্যায়ন করে গ্রাহাম আমাকে নিয়ে গিয়ে বসাল ওঁর বসবার ঘরে।

– ওয়াইন চলবে না হুইস্কি?
– এনিথিং স্যার।
– আমার এই বুড়ো বয়সে ওয়াইন টাই প্রেফার করি, তোমাকেও তাই দিচ্ছি তাহলে।
– অবশ্যই।

দুটো গ্লাসে রেড ওয়াইন নিয়ে এসে গ্রাহাম বসলেন আমার সামনের সোফায়। টেবিলের ওপর জ্বলন্ত মোমবাতি, এছাড়া ঘরে জ্বলছে সেই কমজোরি আলো। আজ এক অন্যরকম ক্যান্ডেল লাইট ডিনার হতে চলেছে। বাইরে বৃষ্টিও শুরু হয়েছে টিপটিপ করে। গ্রাহামই কথা শুরু করল।

– কেমন লাগছে তোমার এই বাড়ি?

– বেশ ভালো, খুব ছিমছাম পরিস্কার ঘরদোর। পরিবেশও বেশ সুন্দর। আপনি কতদিন থেকে আছেন এখানে?

– এই বাড়ি আমার ১০ বছর হয়ে গেল। তবে ২ বছর আগে পুরো বাড়ি আবার নতুন করে মেরামত আর রঙ করি।

– দেখেই মনে হয়েছিল সেটা। বাড়ির আসল বয়স কত হবে?

– তা প্রায় ২০ বছরের কাছাকাছি। এই বাড়ি আমি কিনেছিলাম আমার এক বন্ধুর থেকে। আমার কেনা দ্বিতীয় বাড়ি এটা। তবে বাড়ি কেনার কথা বললেই আমার একটা গল্প মনে পড়ে যায়।

– বাহ্, কেমন সেই গল্প শুনি না।

– আরিঝিট (আমার নামের এমন উচ্চারণই করে এদেশীরা), সেই গল্প কিন্তু একটু অন্যরকমের। তুমি সিওর শুনবে?

– এই দেখুন, আপনি আমাকে লোভ লাগিয়ে দিচ্ছেন। যদি আপনি এখন ভূতের গল্প শোনাতে চান, তাহলে তো আমি একপায়ে খাড়া, এই পরিবেশের জন্য তো আদর্শ!

– ভূত না অন্যকিছু সেসব জানি না। কিন্তু এই গল্প তোমাকে বলা ঠিক হবে কিনা তাই ভাবছি। আসলে, তুমি একা একা থাকো তো এইদেশে, তাই…

– আপনি আজ গল্প না বললে আমি এই একতলাতেই ঘাঁটি গড়ব বলে দিলুম।

– হা হা, সে তুমি থাকতেই পারো। আচ্ছা শোনো তাহলে। আর এই টেবিলে রইল রোস্টেড ডাক, যত খুশি নিতে থেকো।

আমি পা গুটিয়ে জমিয়ে বসলাম। বিদেশের মাটি তে একটা অন্যরকম গল্পের হাতছানি, তাও আবার সত্যি ঘটনা কেস, আমাকে আর পায় কে, চুমুক দিলাম সুরায়। গ্রাহাম শুরু করল।

– এই গল্প আমার এক বন্ধু টমাস স্পুনার-কে নিয়ে। টমাসের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল যখন ওর বয়স ৪৫। তাই ও আমাকে অনুরোধ ওর বাড়ি কিনে নেওয়ার জন্য। আমি সেই প্রস্তাব ফেলতে না পেরে কিনে নি সেই বাড়ি। তবে বন্ধুর দুরবস্থা দেখে ওকেও আমার বাড়িতে আশ্রিত রেখে দি। তা ওর সাথে এর আগে অনেকদিন যোগাযোগ না থাকায় ওর জীবন সম্বন্ধে আমি কিছুই জানতাম না। একদিন ঠিক এইরকমই এক সন্ধেবেলায় টমাস আমার সাথে বসে সুরাপান করতে করতে জানাল যে ওর আমাকে বেশ কিছু কথা বলার আছে। তবে এই কথা আর কাউকে বলা যাবে না কোনদিন। আর তারপর টমাস আমাকে ওর নিজের যে অভিজ্ঞতা শুনিয়েছিল, সেটাই আজ তোমাকে বলব আমি।

– কিন্তু আপনি যে টমাস কে কথা দিয়েছিলেন যে এই ঘটনা আর কাউকে বলবেন না।

– আমি ওর কথা রেখেওছিলাম। কিন্তু এরপর আমার মনে হয় যে কিছু লোককে যদি আমি এই গল্প না বলি, তাহলে নিজের কাছে দোষী থেকে যাব।

– আমি কি সেই ভাগ্যবান মানুষদের একজন?

– তুমি ভাগ্যবান না দুর্ভাগ্যবান, সেটা গল্প শোনবার পরেই ঠিক কোরো না হয়। গল্প টা আমাকে যেমনভাবে টমাস বলেছিল প্রথম পুরুষে, ঠিক সেইভাবেই তোমাকে বলছি, এতে তোমারই বুঝতে সুবিধা হবে। শুরু করছি টমাসের গল্প।

~||♦ শেষ পর্ব! ♦||~

ভূত_আমার_পূত সিরিজের বাকি সবকটা গল্প পড়তে হলে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।

https://www.anariminds.com/category/bhoot_amar_poot/

লেখক ~ অরিজিৎ গাঙ্গুলি