খচাৎ
ঘন্টাদের এলাকায় সন্ধ্যায় খুব কারেন্ট অফ হয়।দিন নেই রাত নেই,খালি কারেন্ট অফ।ঘন্টা যে কমপ্লেক্সে থাকে সেখানকার বিল্ডার যে পাওয়ার ব্যাকাপটা লাগিয়েছে সেটা ম্যানুয়াল।তাই কারেন্ট অফ হলে সিক্যুরিটিকে ম্যানুয়ালি ডিজি চালাতে যেতে হয়।সিক্যুরিটির ছেলেটা একটু জবুথবু, তাই একটু সময় লাগে কাজটা করতে।
কারেন্ট অফের সময় থেকে শুরু করে ব্যাকাপ লাইন দেবার সময়টুকু পর্যন্ত ছানার পড়াশুনোতে আর গিন্নীর রান্নার কাজে খুব অসুবিধা হয়।তার সাথে আরেকটা কেস ও আছে। ঘন্টা সন্ধ্যায় একবার পায়খানায় যায়।আয়েশ করে হাগতে হাগতে কারেন্ট অফ হলে কমোডে সিগেরেটের ছাই ঝাড়তে গেলে সেন্টারে অগ্নি সংযোগের রিস্ক থেকে যায়।বাথরুমে আর কেই বা এমারজেন্সি লাইট রাখে?তখন কমোডে বসে – “ও ইস্মাইল ডিজিটা চালারে” বলে হাঁকার মারতে আর কাঁহাতক ভালো লাগে।
ইস্মাইলের সিক্যুরিটির কাজটা খুব বোরিং,ওর ঘুম পেয়ে যায়।তাই ঘন্টা ঠিক করল এক ঢিলে বেশ কটা পাখি মারবে।
ওর পুরনো স্মার্টফোনটা সিক্যুরিটিকে দিয়ে দেবে।তাতে কারেন্ট অফ হলে হোয়াটসাপে সিক্যুরিটিকে জেনারেটর চালাবার স্ট্যান্ডিং ইনস্ট্রাকশন দেওয়া যাবে।তা ছাড়া সিক্যুরিটির ফেসবুক ওয়ালে কম্প্লেনও পোস্ট করা যাবে।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ।ঘন্টা পুরনো স্মার্টফোনটা ইস্মাইলকে দিয়ে দিল আর তার সাথে ফেসবুক হোয়াটসাপ একাউন্ট খুলে একশা করে দিল।
এখন কারেন্ট অফ হলেই সবাই ইস্মাইলকে মেসেজ করে এ্যালার্ট করে দেয়।ইস্মাইলের ফেসবুক পেজে ফ্ল্যাটের যাবতীয় কম্প্লেনও লিখে দেয়।চারিদিকে ঘন্টার বুদ্ধির ধন্য ধন্য রব উঠে গেল।
উৎপলবাবুর দ্বিতীয় পক্ষের বৌটা ঘন্টাকে দেখলেই একটা মিষ্টি হাসির ছ্যাঁকা দিতো।ঘন্টা ব্যাপারটা বেশ এঞ্জয় করত।এখন ম্যাডাম দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।উৎপল বাবু বয়স্ক মানুষ। কাজের সূত্রে মাসে কুড়িদিন বাইরে থাকতে হয়।বৌদির এক দুর্সম্পর্কের ভাই বেশ আনাগোনা করতেন, তা সেই শালাবাবুকে মার্কেটে কদিন আর দেখা যাচ্ছে না।ঘন্টা কেসটা আন্দাজ করছিল।কিন্তু জিভের আঁড় ভাঙবার জন্য যতটা দরকার ততটা মোটা চামড়া ওর নয়।
একদিন সন্ধ্যাবেলা ঘন্টা বাজার যাচ্ছে।দেখল উৎপলবাবু ইস্মাইলকে খুব ধমকাচ্ছেন।ইস্মাইল কাঁচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।পা টিপে টিপে একটু কাছে যেতেই ব্যাপারটা সাফ হয়ে গেল।- “শুয়োরের বাচ্চা,মাসে হাজার টাকা করে নিস্।বলেছিলাম ছবিগুলো হোয়াটসাপে দিবি।তুই আমার টাইমলাইনে পোস্ট করলি কেন হতভাগা?”
কদিন বেদম অশান্তির পরে,উৎপল বাবু আর তার কচি বৌ পুরী চলে গেলেন।ঘন্টা কেসটা বৌকে বেশ বীরদর্পে বলতে গেছে,অমনি বউ খেঁকিয়ে উঠল –
“তবে আর কী? যাও তুমিও আমার পেছনে চর লাগাও,আমি কিছু ঘটনা ঘটালে তো সেই সুযোগে আমরাও পুরী যেতে পারি,তাই ঘটাবো না হয়।”
ঘন্টা বেগতিক বুঝে বলল – “না না বাবুর পরীক্ষা মিটলেই তো শিলং যাবো”।
মুখ ঝামটা মেরে বউ বলল – “সে তো বাবু হবার আগে থেকে শুনছি,এবার না গেলে, ইস্মাইল নয়,আমিই একটা প্রেম করে তোমার টাইমলাইনে ছবি পোস্ট করব”।
সন্তানের পরীক্ষা মেটার পর কাজের মেয়ে মালতীর হাতে চাবি দিয়ে,ঘন্টারা সস্ত্রীক শিলং চলে গেল।দারুণ পাহাড়ি জায়গা।ফুরফুরে ওয়েদার।উমিয়াম লেকে বোটিং করতে করতে হঠাৎ ঘন্টার মোবাইলে একটা শব্দ হল –
“টুং”।
হোয়াটসাপে মেসেজ করেছে ইস্মাইল।সাথে একটা ছবিও এসেছে।ছবিটা দেখে ঘন্টার মাথায় হাত,চোখ কপালে উঠে যাবার জোগাড়।দেখল ওদের পেপার আলা চন্দন মালতীকে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে।বিছানাটা ঘন্টার ঘরের।ঐ তো সেই বেগুণী রঙের গোলাপ আঁকা চাদর।
মালতীর ম্যাক্সিটাও ঘন্টার বৌয়ের। হনিমুনের সময় কিনে দিয়েছিল বৌকে।সিল্কের দামী মাল।মালতীর খেটে খাওয়া টাইট ফিগারে অবিশ্যি জাঁকিয়ে বসেছে ম্যাক্সিটা।কিন্তু সেকথা বৌকে বলা যাবে না।তবুও রাগ হল ঘন্টার।চোয়াল শক্ত হয়ে গেল,রগ ফুলে গেল।এভাবে বিশ্বাসের প্রতিদান দেয় কেউ?বৌ জিজ্ঞেস করল – “কী হয়েছে গো?”।
– “ঐ তো আবার বাংলাদেশ ভারত লেগেছে ক্রিকেটে।ফালতু মিম্ যত্তসব।”
খেলার খবর বৌ অতটা পাত্তা দেয় না।
চন্দন আর মালতীর ইন্টুপিন্টুটা ইস্মাইলের চোখ এড়ায়নি।পেপার দিয়ে নামতে দেরী হচ্ছে দেখেই ওদের হাতে নাতে ধরেছে ইস্মাইল।মানে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দী করেছে।আহা প্যাপারাজির কাজে কি উন্নতিই না করত বেহায়াটা।দৃশ্যটা কল্পনা করল ঘন্টা।উত্তেজনা বশতঃ দরজা লাগাতে ভুলে গেছিল হয়ত চন্দন…
যাইহোক ছবিটা বৌকে পাঠাল না ঘন্টা। চেপে গেল ব্যাপারটা।
বোট থেকে নেমে সিগারেট খাবার অছিলায় ঘন্টা ফোন করল ইস্মাইলকে।
“হ্যালো ইস্মাইল!”
-হ্যাঁ স্যার।বলুন।
– ছবিটা কাউকে দেখাস না,মেয়েটা লজ্জায় সুইসাইড করলে তুই কিন্তু ব্ল্যাকমেলারের কেস খাবি বাবা,মালতী প্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে,খবরদার কাউকে পাঠাস না।”
– “না দাদা! কাউকে পাঠাইনি”।
– “একদম পাঠাস না।আমি এসে ব্যাপারটা দেখছি।গুড জব বাডি”।
– এ্যাঁ?
– কিছু না,ভালো করেছিস্।
– “কেমন ঘুরছ দাদা?”
– “ভালো রে,শোন রোমিং কাটছে,রাখিরে টাটা”।
শিলং থেকে ফিরেই মালতীকে দেখে ঘন্টার শরীর জ্বলে গেল।গিন্নী ওঘরে ছেলেকে পড়াতে বসেছিল।সে সময় ঘন্টা মালতীকে বলল “এদিকে শোন্ মালতী”।
মোবাইলটা খুলে দেখাতেই মালতী তো ঘন্টার হাতে পায়ে পরছে।
“দাদা,এ ছবি বরের হাতে গেলে মরে যাবো।চন্দন আমায় টাকা দেয়,নইলে ছেলেটাকে ভালো স্কুলে পড়াতে পারব না।”
“যা কাজে যা,বৌদিকে বলছি না।তাহলে তোর কাজটা যাবে।কামাই করবি না।আর যেন না শুনি এ্যাডালটারি করছিস্।এ ছবি আমি মুছে দেব”।
-এ্যাঁ
-মানে বিয়ের পর অন্যের সাথে আজেবাজে কাজ করছিস্।
– না দাদা!আর কক্ষণো করব না।ও কতা কাউকে বলবেন না।
– বিদেয় হ।আর বৌদির ম্যাক্সি পরে আমাদের খাটে উঠে ওসব করেছিস,কথাটা বলব বৌদিকে?
– আপনার দুটি পায়ে পড়ি দাদা।বলবেন না।
সেদিনই একটা এমার্জেন্সি কিনে নিয়ে আসল ঘন্টা। এটা সেটা বলে ইস্মাইলের থেকে মোবাইলটাও ফেরত নিয়ে আসল ঘন্টা।কিছু ক্ষমতা চাপা থাকলেই মঙ্গল,আর কিছু সত্যও গোপন থাকাই ভালো হয়ত।
পরেরদিন ছেলেকে ইস্কুল দিতে যাওয়ার সময় ঘন্টা দেখল ইস্মাইলের হাতে একটা নতুন স্মার্টফোন।ইস্মাইল ঘন্টাকে দেখে বলল – “এটা ছাড়া টাইমপাস করাই মুস্কিল দাদা। বিসমিল্লাহ টেলিকম দোকানটা আছে না?ঐ রাজুভাই দিল।মাসে মাসে দিয়ে দেব”।
কমিটির মিটিংয়ে প্রস্তাবে সিক্যুরিটি ইনচার্জ গগনবাবুকে প্রস্তাব দেওয়া হল – “ইস্মাইল কে পাল্টে দিন,বড্ড নাক গলায় সব ব্যাপারে”।
গগনবাবু মাথা নেড়ে বললেন – “তবে ছেলেটা তো সবচেয়ে স্মার্ট”।
সবাই একপ্রকার সমস্বরে বলল – “অত স্মার্ট ছেলে লাগবে না”।
~~~☀️ সমাপ্ত ☀️~~~
লেখক ~ দেবপ্রিয় মুখার্জী (গুলগুলভাজা)
প্রচ্ছদ ~ various sites
www.facebook.com/anariminds
#AnariMinds #ThinkRoastEat