
প্রি-ওয়েডিং
– চিয়ার্স!
– চিয়ার্স! চার চারটে বছর… আর ফাইনালি আমরা লাইসেন্স পেতে চলেছি! ইয়ে ইয়ে!
– কন্ট্রোল তানিয়া কন্ট্রোল, এখনও ৯ দিন বাকি কিন্তু সেই অ্যাডভেঞ্চার শুরু হতে।
– তাতে কি? এটাই সেই রেস্টুরেন্ট না, যেখানে আমরা প্রথমবার মিট করেছিলাম?
– একদম! আর সেদিনও তুই আমাকে একঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখেছিলিস।
– হা হা, আমরা আর “লেডিস ফার্স্ট” ব্যাপারটাকে পাত্তা দিই না, জানিসই তো। আর সেদিন তো খুব বলেছিলিস যে আধঘন্টা যেন আধ সেকেন্ডের মতো কেটে গেল।
– আহা, প্রথম দিন ছিল তো, অমন একটু বলতে হয়। যাকগে, তুই এনেছিস যেটা আনতে বলেছিলাম?
– কোনটা? ও হ্যাঁ, দাঁড়া বার করি। প্ল্যানটা কি বল তো?
– ওয়েট, আমাকেও বার করতে দে।….. ওকে, এবার কাগজটাকে দু হাত দিয়ে এইভাবে ধর…
– ধরেছি, তারপর?
– বাহ্, এইবার দুদিকে দিয়ে টেনে এইভাবে মাঝখান দিয়ে ছিঁড়ে ফেল।
– তুই পারিসও বটে! অ্যা, এই নে, ডান।
– পার্ফেক্ট, আমাকে দে তোরটা…. এই রইল পড়ে। ওয়েল ডান তানিয়া! মিশন অ্যাকমপ্লিশ্ড!
– এবার ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিস না আবার।
– হুঁঃ, বয়েজ ডোন্ট ক্রাই!
– ঢং! এই শোন না, তুই কিনে রেখেছিস ওটা?
– ফ্যামিলি প্যাক অর্ডার করেছি রে। ৫ রকম ফ্লেভারের সেট, রান্নায় আলাদা মাত্রা এনে দেয়। যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করবে।
– ইশ, ডার্টি মাইন্ড! দেখব তোর কেমন সংযম। আমার তো মনে হচ্ছে প্রথম অ্যানিভার্সারির আগেই অন্নপ্রাশনের তোড়জোড় করতে হবে।
– আশীর্বাদ দিচ্ছিস, নাকি অভিশাপ?
– যেভাবে নিতে ইচ্ছে হয় তোর।
– আরে জানিস, আমার সব ডেঁপো ভাই বোনেরা ঠিক করছে আমাদের ঘরে নাকি স্পাইক্যাম ফিট করে রাখবে।
– পর্ন ছাড়বে নাকি রে? পিকলু কে বলব নজর রাখতে।
– হা হা, আরে পিকলু তো শালা হেব্বি কনফিউজড। বরপক্ষের দিক থেকে থাকবে, না কনেপক্ষের দিকে, সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।
– কমন ফ্রেন্ডের এই এক ঝামেলা। চল, পিকলু কে আমি কনেপক্ষেই নিলাম। কিন্তু ওয়ে, আমার কিন্তু কানে এসেছে যে তোরা একটা দারু পার্টির প্ল্যান করছিস। আমার জন্য বাঁচিয়ে রাখবি কিন্তু। পরে অ্যাটাক করব।
– লজ্জা নেই তোর! বিয়ে হতে চলেছে রে, সে খেয়াল আছে?
– বউদের কি ড্রিঙ্ক করা বারণ নাকি? যত্তোসব!
– আঙ্কেলের খবর বল। মেয়ের জন্য মনকেমন করা শুরু হয়ে গেছে?
– স্বাভাবিক। সবাই চেনাজানা হলেও বাবার মন তো, বুঝতে পারছি মাঝে মাঝেই একটু আনমনা হয়ে পড়ছে। তবে তোদের আর কি? প্রার্থনা করি আমাদেরও যেন মেয়েই হয়, তখন তোরা বুঝবি।
– আচ্ছা, কিন্তু ভুল করে যদি ছেলে হয়ে যায়, তাহলে কিন্তু কথা দিচ্ছি আমি পাণ্ডু হবো।
– গান্ধারী কে বিয়ে করে গাণ্ডু হ। ফ্যামিলি প্যাক কি তোর ফ্যামিলি পরে ঘুরবে?
– হা হা, তুই ভয় পাচ্ছিস তাহলে। বুলাদি কে বলিস মালা-ডি আনতে।
– চোপ! শোন, বাপি আজ বলে দিয়েছে আমাকে যে বিয়ের ডেটের আগে এটাই কিন্তু আমাদের শেষ দেখা। এখন আর বেশি বাইরে বেরোতে বারণ করেছে।
– ওহ্, নয়তো আঙ্কেল তোকে একটা ঘরে বন্ধ করে চাবি দিয়ে দেবেন নাকি? স্বপন সাহা স্টাইলে, হা হা। তা উনি আজকের এই সাক্ষাতের জন্য কিছু মালকড়ি পাঠিয়েছেন? আমার কিন্তু হেব্বি খিদে পাচ্ছে।
– হ্যাঁ পাঠিয়েছে তো। এই নে ৫০ টাকা, তোর অউকাদ মাথায় রেখে। ফুচকা আর মোমো ছাড়া আমার তো মনে পড়ে না যে তুই আর কিছু আমাকে খাইয়েছিস এত বছরে। হ্যাঁ, একবার কফি আর বাদাম কিনে দিয়েছিলিস।
– হতভাগী! আইসক্রিম, পিৎজা, চিকেন রোল, চেলো কাবাব – সব ভুলে গেলি?
– হ্যাঁ সব ভুলে গেছি। আবার মনে করা দেখি।
– হেসে নে তানিয়া, হেসে নে। তুই শালা শুধরোবি না।
– তুই কি চাস সেটা?
– না, এমনটাই থাকিস। আরে শোন, বাবা মা তো ফর্ম্যাল ইনভাইটেশন কার্ড দিতে যাবেই দুজনের বাড়ি। তার আগে আমরা এখনই এক ঝলক দেখে নি না কার্ডগুলো। আমার কাছে আছে এক পিস। তুই এনেছিস?
– একদম, দারুণ আইডিয়া! এবারে লেডিস ফার্স্ট। …… দাঁড়া…….. এই দেখ……. কেমন?
– আরিব্বাস! লাল এনভেলপ। তোর চয়েস?
– না, আমার পিঙ্ক পছন্দ ছিল। কিন্তু বাপি রিজেক্ট করে দিল। খুলে তো দেখ।
– আচ্ছা……. দাঁড়া দেখি……. আরে, এটা কিন্তু ঠিক নয়। বরের নামের বানান কি করে ভুল লিখলি? তানিয়া ও আবির। আবীর তো ব-এ “ঈ” হবে, “ই” নয়।
– আরে ধুর, নামে কি বা আসে যায়। দে দে, তোরটা দেখি।
– ওক্কে, এই নে দেখ।
– কই দেখি দেখি! ওরে বাবা, সামনেই রাধাকৃষ্ণের ছবি, লীলাখেলা দেখাবি তো তুই। সুমিত ওয়েডস শ্রীলা। বাহ্, সেক্সি হয়েছে তো কার্ড টা। তোদের ছবিও আছে ভেতরে আবার। দারুণ! অ্যাই, শ্রীলা দেখেছে?
– উঁহু, সারপ্রাইজ ওর জন্য।
– তুই শালা খুব লাকি সুমিত। আমি তো বি কম পাস ছিলাম, আর তুই একজন পি এইচ ডি স্কলার পেলি। শ্রীলার হুকুম মেনে চলবি সবসময়। আমি ওকে একটা বেল্ট গিফট করব।
– আবীর কে বলিস আমাকে থ্যাংকসগিভিং ডে তে ট্রীট দিতে। বড় সুবোধ বালক।
– আবার শুরু করলি?
– না রে সিরিয়াসলি, আবীর খুবই ভালো ছেলে।
– জানি, আর তুইও।
তানিয়া হাত বাড়িয়ে সুমিতের দুহাত জড়িয়ে ধরে।
– আমি তোকে ভালোবাসি না সুমিত।
– ইমো হোস না, আমিও তোকে একদম ভালোবাসি না। মনে রাখিস, আমাদের এই সিদ্ধান্তের পিছনে কিন্তু একটা কারণ আছে।
– আমি জানি। কিন্তু পরের জন্মে কোনও এক্সকিউজ শুনব না বলে দিচ্ছি।
– কথা দিচ্ছি তানিয়া। তবে এবার উঠতে হবে রে। আর হ্যাঁ, মেয়ে হলে খবর দিস কিন্তু!
– স্টপ ইট!
– ভালো থাকিস…
– তুইও…
– টাটা তানিয়া।
– বাই সুমিত।
||
– স্যার দেখুন তো এইগুলো, ২৭ নম্বর টেবিল পরিস্কার করতে গিয়ে এই কাগজ গুলো পেলাম। দুজন ছেলে মেয়ে বসেছিল। কিছু দরকারি নয়তো?
– কই দে দেখি। মাঝখান থেকে ছেঁড়া তো। দাঁড়া…. জুড়লে কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট মনে হচ্ছে। ছয় মাস আগে করা দুজনের টেস্ট। একজন সুমিত সেনগুপ্ত, আর একজন তানিয়া মুখার্জী। দুজনের রিপোর্টেই তো মোটা করে একই জিনিস লেখা রে!
“থ্যালাসেমিয়া মাইনর”।
~~~♣~~~
লেখক ~ অরিজিৎ গাঙ্গুলি
(এই গল্পটা ২০১৫ সালে আমাদের ব্লগ anariminds.com এ প্রকাশিত হয় ইংরাজি তে। কিন্তু তারপর আর এক জনপ্রিয় লেখকের ব্লগে অনেকটা একইরকম প্লটের গল্প আসে, এবং ২০১৭ সালে তৈরি একটি শর্ট ফিল্মেও এমনই প্লট চোখে পড়ে। এই তিন সূত্রের কেউই কারোর নকল করেননি বলেই আমার বিশ্বাস।)