
রঙ্গোলি
উহ ছিরিধর! কে নাম রেখেছিল রে তোর? শালা বিহারি!
কানখুসকি দিয়ে কান চুলকাতে চুলকাতে মুখটা আরামে সরু হয়ে গিয়েছিল শ্রীধরের। ভবেশ কাকার কথাই ওরকম। মুরুব্বি রিক্সার লাইনের।
কেন ছিরিটা কি খারাপ নাকি কাকা! খি খি করে হাসে শ্রীধর। কালই সুধোর দোকানে কেমন কাটটা মেরেছি দেখেছ? রেস থিরির কাট। পঞ্চাশ টাকা নিয়েছে মাইরি! একবার তাকাও না কাকা।
ভবেশের মুখটা দেখে হাসি পায় শ্রীধরের। শালা চুত্তর কা বচ্চা। শালা বুঢ্ঢা। শ্রীধরের জওয়ানিতে জ্বলন মালটার।
কাক্কা এত্ত জ্বলো না মাইরি! একে তো দিনরাত তোমার পাশের ঘরে থেকে কানমাথা জ্বলে আমার। দিনরাত বাওয়ালি করো বৌয়ের সাথে। আজকে মাল আনোনি নাকি? পিও অওর খুশ রহো না।
পিছন থেকে টিনের দরজাটায় ক্যাঁচ করে আওয়াজ হয়। একটা কপালে সিন্দুর লেপা আর কাজল দাগানো চোখ দেখে শ্রীধর। কমলা সিন্দুর নয়, বাংগালি সিন্দুর। এই রঙটা মাতোয়ারা করে শ্রীধরকে। ঘামে লেপটে চুলে লেগে থাকা ভালোবাসার রঙ। দরজায় দাঁড়িয়ে মিতা, ভবেশের অওরত। অনেকবার চেষ্টা করেছে শ্রীধর
মিতা ভাউজি বলার। কিন্তু মিতা মুখে আসে তো ভাউজি একবারেই আসে না। বদলে একটা গান বাজে বহুত দূর থেকে। ‘দিয়া গুল করা রানি হাসি ছুটি–উঠি ঘুঙ্ঘট সারা বদন টুটি। ’লাস্ট টাইম দেশে গিয়েছিল যখন প্রেরাইমারি স্কুলের মাঠে মজলিশে বেজেছিল গানটা। চুল্লু খেয়ে বেধড়ক নাচ শ্রীধরদের। ধমৌউনে শ্রীধর জন্মায়নি। ও জন্মেছে ট্যাংরার বস্তিতে। বাপদাদার গাঁয়ে শ্রীধর হয়তো আখরি বিশ সালে তিন চার বার গেছে। সর্ষোক্ষেতের হলুদ কাকে বলে প্রথমবার গাঁয়েই দেখেছে ও। বিলকুল ওমনি হলুদ ভবেশের অওরত। হলুদ ফুলের উপর জমে থাকা সুবহার ওসের মতো। সব রক্ত একসাথে গরম হয়ে যায় শ্রীধরের। বুকে চিনচিন দর্দ।
ভবেশ এসে মারে ওকে রোজ। শালা চুল্লুখোর বুঢ্ঢা। মারতে মারতে গালি দেয় হারামিটা। কান পেতে শোনে শ্রীধর। মিতার কান্নার আওয়াজ। গোঙানির আওয়াজ। ইচ্ছা করে এ পাঁচফুটিয়া দিওয়ার ভেঙে ওপারে যায় ও। পরদিন সকালে আবার যখন দেখে মিতাকে, গুল দিচ্ছে চুপচাপ, মনের ইচ্ছাটা দবাতে হয় ওকে। এত্ত মার খায়..লেকিন অওরত জাতভি কেয়া অজীব জাত হ্যায়।
আর লাগবে? একটা প্লেটে চানাচুর চাট এনেছে মিতা।
ওদের শনিচ্চারের রাতের দারুর আড্ডার চাট। বেসামাল হওয়ার রাত। হপ্তায় এক দিন সকালে ওঠার তাড়া থাকে না। ইতবারে বাবুদের অফিস থাকে না। রিক্সায় ওঠার দরকার থাকে না। দশটার আগে কেউ বাজার যায় না। তাই শ্রীধরদের রাহত।
বোতলের ছিপি খুলে শ্রীধর দারু ঢালে। জল মেশায় তারপর। নাকের কাছে নিয়ে শোঁকে। তারপর চোখ বন্ধ করে এক ঢোকসে। ভবেশের নেশা হয়েছে আগেই। তিন চার বার গিলে ভুল বকছে। পুরোনো নেশাড়ু না। শালার রক্ততে দারু মিশে গেছে। শরাবী..শোচ্ না কর মতওয়ালে। দারুর গেলাসে চুমুক দিয়ে একটু হাসে শ্রীধর।
একটা সাহায্য করবেন? দরজার ফাঁক দিয়ে আবার গান বেজে ওঠে।
উনি বেহুঁশ হয়ে গেলে একটু ঘরে দিয়ে যাবেন?
মিতার দিকে একদৃষ্টে তাকায় শ্রীধর। খানিকক্ষণ তাকানোর পর মিতার চোখে চোখ মেলাতে পারে। উত্তর না দিয়ে শুধু তাকিয়েই থাকে। সর্ষোক্ষেতের হলুদ একবার চমকে আরো সোনালি হয়। ঠোঁট টিপে কি কথা চেপে যায়। ভবেশের ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এক নিঃশ্বাসে দ্বিতীয় গেলাসটা শেষ করে শ্রীধর। আবার সেই চিনচিনে দর্দটা। এবার জোরে মারে বাঁদিকে। ভবেশের মাতাল বেহুঁশ শরীরটা কাঁধে ভর দেওয়ায় শ্রীধর। দরজায় টোকা দেয়।
এই প্রথম বার ভবেশের ঘরের ভেতরে পা রাখে ও। জেনানা থাকলে এইরম এঁদো সোদা ঘরটা কেমন তকতকিয়ে ওঠে!
কোথায় শোওয়াবো?
ব্যস্ত পায়ে বিছানার কোণাটার দিকে এগোয় মিতা। এখানে..এখানে শুইয়ে দিন। ভবেশের শরীরটা বিছানায় ঠেকাতে গিয়ে একবার মিতার হাতে হাত লেগে যায় শ্রীধরের। চারশ চল্লিশ ভোল্টের ঝটকা লাগল না তো কই! বদলে সেই চিনচিন! ওহ্, পাগল হয়ে যাবে শ্রীধর।
আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি পারব এবার।
দরজা ঠেলে বাইরে আসে শ্রীধর। আকাশটা গুমোট, কালো। একটাভি তারা নজরে আসে না। শুধু আধখানা চাঁদ একা একা চেয়ে আছে আকাশে। সামনেই মহালয়া। পুজোর সময় মিতা আলতা পরবে। আগেরবারও পরেছিল, তারপর টাইমের জলে বাসন মাজার সময় আলতা পায়ের ছাপ রেখে এসেছিল কলতলায়। শ্রীধর চুপি চুপি কলতলায় তারপর সেই ছাপে পা ঘষেছিল। মিতা কখন আবার ফিরে এসেছে খেয়াল করেনি। শুধু একটা মৃদু শব্দে চমকিয়েছিল শ্রীধর–একটু সরবেন? বুরবকের মত সরে দাঁড়াতে কলতলায় পড়ে থাকা সাবানটা তুলে নিয়ে চলে গেছিল মিতা। একবারও পিছনে তাকায়নি! “জান জমানে কে দুশমন বানাকে–হমারেকে বরবাদ কৈলা “, দূরের আকাশটার দিকে তাকায় শ্রীধর। চাঁদ ভি শালা ক্ষুদকে তরাহই বরবাদ হ্যাঁয় আজ।
****************************************************
পাঁচ ঘরের এই ভাড়া বাড়িটায় চারঘর ভাড়াটে। আরেকটা ঘরে ছমাস থেকে কোনো লোক নেই। ভাড়া দেখাতে বাড়ির মালিক রামকৃষ্ণ হালদার মাঝে মাঝে লোক আনে। নানা বাহানায় মিতার দরজায় টোকা দেয়। জল চায়। জল খেতে খেতে মিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। লক্ষ্য করেছে শ্রীধর। শালা খা*কির বাচ্চা।
শূয়োর কা অওলাত।
কটা শাড়ি হলো মিতা? পুজো তো কাল থেকে।
উত্তর দেয় না মিতা। শুধু চাপা একটা হাসি ঠোঁটের ফাঁকে।
কি রঙ পছন্দ তোমার? হালদারের ঠোঁট স্টিলের গ্লাসে ঠেকানো, চোয়াল ঝুলে পড়েছে।
হালদারদা! আমার ভাড়াটা নিন। মিতার দরজা থেকে রামকৃষ্ণ হালদারকে সরাতে চায় শ্রীধর। হালদারের দিকে টাকা বাড়িয়ে মিতার দিকে তাকায় ও। মিতার চোখ পড়া যায় না। দিলকে অন্দর মালুম নেহি চলতা কেয়া হ্যায়। ধ্যাত তেরি কি!
হালদার টাকা নিয়ে চলে গেলে রাঁধতে বসে শ্রীধর। আজ বেঙ্গন আর পালং ছাড়া কিছু নেই। ভাতের হাঁড়ি নামাতে গিয়েই বিপত্তি। ভাতশুদ্ধ ফ্যানটা চলকে হাতে পড়ে। হাঁড়িটা কোনোমতে নামিয়ে কলতলায় দৌড়ায় শ্রীধর। টাইমের কলে জল একটা অবধিই থাকে। তাও একবার চেষ্টা। ঠিক যা ভেবেছে তাই! জল চলে গেছে। জ্বলছে জায়গাটা–রক্ত এসে ভিড় করেছে তপ্ত ধমনীতে। ফোস্কা পড়ে যাবে। ঘরে তোলা জল নেই আর।
হাতটা ডলতে ডলতে ঘরে পা বাড়ায় শ্রীধর।
কি হয়েছে? দরজায় দাঁড়িয়ে সর্ষেফুল।
কুছ নেহি। কুছ নেহি হুয়া।
দেখি। হাতটা টানে মিতা। এদিকে আসুন।
ভবেশদার ঘর ফাঁকা। বুড়াটা কোথায় চরতে বেরিয়েছে। বিসলেরির জারটা তুলে ঘরের কোণের ড্রেনটায় শ্রীধরের পুড়ে যাওয়া হাতে জল ঢালে মিতা।
বাইরে কোথাও একটা ঢাক বাজছে। মনে হয় পাড়ার মন্ডপে ঠাকুর এসেছে।
এটা দিয়ে মুছে নিন। গামছা বাড়ায় মিতা।
ঢাকের আওয়াজটা বাড়তে থাকে।
আপ কুছ সমঝতি ভি হো?
সর্ষেফুল চোখ তুলে তাকায়। যাহ্ শালা, অবাক হয় নি তো!
কোনো উত্তর না দিয়ে টুথপেস্টের টিউবটা টিপে একগাদা পেস্ট বার করে জ্বলা জায়গাটায় লাগাতে যায় মিতা। হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে ফেলে শ্রীধর।
কুছ মত লগাও। জ্বলনে দো উসে!
ফোস্কা পড়ে যাবে। জোর করে মিতা।
হাতটা ধরে শ্রীধর শক্ত করে টানে মিতাকে। বুকের মধ্যে।
আর এখানে রোজ তোমাকে দেখে যে ফোস্কা পড়ছে?
ভালোবাসেন, অথচ সম্মান করেন না?! এটা অন্যের ঘর জানেন না!
অনেক অনেক আগে বাবুজির কাছ থেকে তমাচা খেয়েছিল শ্রীধর। গাল লাল হয়েছিল, কানমাথা গরম। কিন্তু এমন চাটা আগে খায়নি তো। মাথাটা কেমন টলে যায়।
ঘর বানাতে রাজি আমি। তুমহার সঙ্গে। মিতাকে শক্ত করে ধরে দুই হাতে শ্রীধর। এ বুঢ্ঢা কি দেবে তোমায়! রোজ রাতে আমি শুনতে পাইনা মিতা?
চলো মেরে সাথ। হাম ভাগেঙ্গে। দূর ইহাসে। ট্যাংরামে আমার রিস্তেদারের কাছে যাব আমরা। এই পুজোর মধ্যেই। দশমীর দিন? সব আদমি নশেমে চুর রহতা হ্যাঁয় উসদিন। কুছ বোলো? কুছ বোলো মিতা?
হাত ছাড়িয়ে নেয় মিতা। হাল্কা হাসি ওর গলায়।
আপনি কিচ্ছু বোঝেন না–শ্রীধরের হাতটা আবার টেনে টুথপেস্ট লাগাতে যায় ও।
হাত ছাড়িয়ে এক লাথিতে বিসলেরির ফাঁকা জারটা বাইরে ছুঁড়ে ভবেশের ঘর থেকে বেরিয়ে যায় শ্রীধর। টিনের হাল্কা দরজাটা ঢাকের তালে তালে দুলতে থাকে। দরজাটা লাগায় না মিতা। খাটের কোণে চুপ করে বসে থাকে।
***************************************************
শ্রীপুরের পুজোটায় ধুমধাম হয় খুব। প্রচুর মানুষের ঢল নামে। পাড়ার বেশ কটা বাড়ি থেকে শ্রীধরকে ডাকাডাকি করে। যে গলিতে গাড়ি ঢুকতে দেয় না, সেখানে রিক্সার অবাধ প্রবেশ। ফলে শ্রীধরদের লাইনে রিক্সার হেব্বি কাটিং।
রিক্সার চ্যাসিসটা ফ্রেম থেকে ঢিলা হয়ে এসেছে।
পিছেমে একঠো রড লগাদে বিট্টু। সাপোর্ট রহেগা। চ্যাসিস কো থোড়া উঠাকে লগা। ওজন কম পড়েগা ফির।
বিট্টু দাঁত কেলায়। ওজন টানতে না পারলে হবে কাক্কা।
আজ রাতে সব সেজেগুজে বেরোবে। ভারি ভারি শাড়ি পড়বে। শাড়ির ওজনেই কত ওজন বাড়বে সবার।
নবমী–দশমী একই দিনে পড়েছে আজ। পাড়ার প্যান্ডেলটা পাশেই। দোকান থেকে সুন্দরী প্রজাপতিদের ভিড়টায় চোখ রাখে শ্রীধর। লাল নীল হরা পিলা সব রঙ মিলাকে একসাথ ডাল দিয়া হ্যাঁয় কোই। সব রঙ মিশে কালো কালো লাগে ওর ভিড়টা। সকালেও দেখে এসেছে মিতার দরজা বন্ধ। সেদিনের পর থেকে ভবেশদার সাথেও বসা হয়নি দারু নিয়ে। একা একা একের পর এক পাঁইট গিলেছিল দেশীর। বিলকুল কাঁচা। বুক জ্বলছিল ওর। মনের জ্বালার থেকে বেশি জ্বলছিল না লেকিন। সংসারে করে সতী সাজবে সব অওরত। সংসার ছাড়বে না। গুড্ডে গুড়িয়ো কা খেল বহত পসন্দ মিতার। পিঠের কালশিটেভি বহত পসন্দ। বা রে জেনানা! তালে যার সাথে ঘর বাঁধা যায় না তাকে নিয়ে এত দর্দ কিসের! দুরাত পর পর বোতল নিয়ে ঢোকা দেখে আঁখমে ইতনা পানি কাঁহে?! ছেনালি যত্ত।
প্যান্ডেল থেকে প্রসাদ দিয়ে গেছে লাইনে। খিচড়ি ভোগ। এত্ত দিয়েছে আজ এতেই দুপুরের খাবার হয়ে যাবে। এক নৌকা ভর্তি খিচড়ি। খবরের কাগজ দিয়ে নৌকাটাকে ঢাকে শ্রীধর। আজ সোনালের কাছে যাবে রাতে। সালভর আগে, যবের থেকে এ ভাড়াটায় এসেছে যাওয়া হয়নি একবারও। সোনাল হাসবে ওকে দেখে। হেসে লুটোপুটি খাবে। বলবে কা মেরা নাগর কাঁহা ছুপন গৈলা তু! সে কথা মনে করে শ্রীধরের কান লাল হয়ে যায়। কিন্তু যেত্তেই হবে আজ–হট–টা শাওন কি ঘটা! বহত হো গয়া মাতম!
শ্রীধরকাকা! পিছন ফিরে তাকায় শ্রীধর। পাশের ঘরের মহেশদার মেয়ে মুন্নি।
তোমায় মিতাকাকী ডাকছে।
কে ডাকছে?
মিতাকাকী। বলল খুব জরুরী দরকার।
শ্রীপুর ছাড়িয়ে ব্যাঙ্কের রাস্তাটায় ওঠার মুখে একটা খুব উঁচু ঢাল আছে। সেটায় সওয়ারি নিয়ে উঠতে গেলে শ্রীধরের মনে হয় সিনাসে দিল নিকলকে বাইরে চলে আসবে। হাতুড়ির বাড়ির মতো শব্দ হয় বুকে। আজকের আওয়াজটা আরও জোরদার। থুতু গিলে আওয়াজটাকে চাপে শ্রীধর। জলের বোতল বার করে এক ঢোঁকে জল গেলে অনেকটা।
যা কে বোল, এখন বিজি আছি। পরে যাব।
দুই বিনুনির মুন্নি মাথা ঝাঁকিয়ে লাফাতে লাফাতে চলে যায়।
খানিকক্ষণ গোঁজ হয়ে বসে থাকে শ্রীধর। শালা পুরা মুড খরাপ কর দিয়া! দরকারের সময় শ্রীধর। বেওয়ারিশ প্রেমিক নাকি বে! যখন খুশি কাজ করিয়ে নেওয়া যায়!
নতুন সারানো রিক্সাটাকে নিয়ে প্যাডলে চাপ দেয় ও। এ মহল্লাতেই আজ থাকবে না।
*******************************************************
সোনালের কাছে আজ নশাটা ভালো জমেনি। ওর নঙ্গা শরীর দেখে জাপটে ধরেছিল ওকে শ্রীধর। বুকে মুখ গুঁজতেই সিঁদুর ধ্যাবড়ানো চেহারাটা মনে পড়ে গেল। রাজেশ খন্নার গান ছিল না একটা–ইয়ে লাল রঙ কব মুঝে ছোড়েগা! ভবেশের নামের সিঁদুর, তাও শ্রীধরের এত কমজোরি কেন। খিলখিলিয়ে হাসল সোনল।
কেয়া নাগর, দুসরা কহি নথবা তোড়ন কা পিলান হ্যাঁয় কেয়া আজ? সম্ভাল হো বাবুয়া! তুহার চিড়িয়া সিনেসে উড় গইলবা।
হাত কামড়ে পাক্কা পাঁচশ টাকার নোটটা ছুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে শ্রীধর। পুজোর সময় খা*কি দের রেট আলাদা।
পাড়াটাতে ঢুকে প্যান্ডেলের দিকে তাকায় ও। অনেক জেনানার ভিড়। সিঁদুর খেলবে একটু পরে। মিতাও খেলবে নিশ্চয়ই। তারপর কলপাড়ে বসে ডলে ডলে সিঁদুর তুলবে। সারা মুখ, পিঠ, বুক লাল হয়ে যাবে। সেদিকে তাকিয়ে থাকবে শ্রীধর। যত পূজাই আসুক, এ তসবিরটা তো পাল্টাবে না। কলতলায় মিতা, আর ওর দিকে তাকিয়ে শ্রীধর। আর নিজেকে সম্ভালনার জায়গায় নেই ও। তবাহি হোকরহি দম লে সক্তা কোই।
ভাড়া বাড়িটার বাইরে অনেক লোকের জটলা। সব কোই বুরবকের মতো ঠাকুর দেখতে বেরোবে নাকি! শিস দিতে দিতে ঘরের দিকে পা বাড়ায় শ্রীধর।
পুলিশ এসেছে। মহেশ দাঁড়িয়ে বলে ঘরের মুখটায়।
কাহে?
মিতাবৌদি সুইসাইড করেছে। কোন শালা আজ দুপুরে সর্বনাশ করে দিয়ে গেছে। পুরো এলাকা ফাঁকা ছিল আজ।
মিতার ঘরের দরজায় পুলিশের সাদা ইউনিফর্মটা দেখা যায়। সাদা অওর মত কা রঙ এক জ্যায়সা!
দৌঁড়ায় শ্রীধর। খাটের কোণাটায় শোওয়ানো শরীর। শ্রীধরের রাণীর।
ভবেশ মাথা চাপড়া দিয়ে কাঁদছে।
জানিনা স্যার, এ সব্বোনাশ আমার কে করল। আমি ছিলাম না। বাড়ি এসে দেখি নতুন শাড়ির এই প্যাকেটটা! বাসনপত্র, বিছানার চাদর সব লন্ডভন্ড। আর মিতা, মিতা ঝুলছে। স্যার..আ..আআআ..ভবেশ আর কথা বলতে পারে না।
এই ব্যাগটায় এত জামাকাপড় কেন? কোথায় বেরোচ্ছিলেন নাকি উনি? সাদা ইউনিফর্ম জিজ্ঞাসা করে।
ব্যাগটা দেখো তালুকদার। প্রায় পুরো সংসার ঢোকানো!
মাটিতে রাখা ব্যাগটার থেকে মিতার শাড়ি উঁকি দেয়। হলুদ শাড়িতে সবুজ ছোপ ছোপ। হতভম্ব চোখে দেওয়ালের আয়নাটার দিকে চোখ পড়ে শ্রীধরের। আয়নার তাকটায় সিঁদুরের কৌটোটা। নেয়নি মিতা।
এক এক পা করে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় শ্রীধর। দরজা খুলে নিজের বিছানার পাশে ধুপ করে বসে পড়ে। আলু কাটার চাক্কুটা পড়ে আছে গ্যাসের পাশে। খোসা লাগা গায়ে এখনও। খোসা ছাড়াতে চেয়েছিল তো আরেক জনও। হাতের মুঠিতে চাক্কুটাকে নিয়ে বসে শ্রীধর। বাঁ হাতের নীলচে শিরায় দপদপ করে রক্ত। এক টানে বেরিয়ে আসবে সিন্দুরী লাল। কোথাও না কোথাও এক হয়ে যাবে মিতার সাথে।
“ভালোবাসতে পারেন! সম্মান করতে জানেন না? ”কে যেন দূর থেকে বলে ওঠে! কাজল দাগা চোখ কথা বলে ওঠে শ্রীধরের চোখের জলের ওপার থেকে। চাক্কুটা নামিয়ে রাখে শ্রীধর। বুঝদিল কঁহাকা। মত আসান হ্যাঁয়! লেকিন জিন্দেগি! !
~~~☀️ সমাপ্ত ☀️~~~
লেখিকা~ পিয়া সরকার
প্রচ্ছদ ~ youtube
www.facebook.com/anariminds
#AnariMinds #ThinkRoastEat