পাণ্ডুলিপি

Conversation, Friends, আদতে আনাড়ি, বাংলা

– চিন্ময় তরফদার যে, আসুন আসুন! এবারের পাণ্ডুলিপিটা এনেছেন তো?

– হুঁ, আসলে…

– বেশ বেশ। ওই কোণার টেবলটায় রেখে দিন, কেমন?

– ইয়ে মানে, পাণ্ডুলিপি রাখব না ভাবছি!

– আরে, প্রুফ আমি করিয়ে নেব’খন।

– তা নয় ঠিক…

– টেবলটা ওইদিকে। বইমেলায় রিলিজ করতে হলে আর দেরী করলে চলে নাকি মশাই!

– মুন্সীবাবু, এইবারটা থাক। বই করার দরকার নেই।

– অ্যাঁ! বই থাক! কী বললেন?

– আজ্ঞে, আপনার শ্রবণশক্তি লাজবাব!

– গেল শনিবার সংবাদপত্রে ষোল পয়েন্টের বিজ্ঞাপন চলে গেছে, “আসছে শীতে, পাঁচটা খুন, আসছে আবার ‘তুম্বাচুন’!”

– আপনারই দৈনিক, আপনি ঠিক সামলে নেবেন জানি…

– বটে! তা আমাদের বাদ্দিলে কারা আপনার ওই উদ্ভট গোয়েন্দা গপ্প করবে? ‘দত্ত’স্’?

– নাঃ। বললাম যে, এইবারে বই থাক।

– বই ছাড়া নিউটাউনের ফ্ল্যাটের লোন শুধবেন কী করে শুনি।

– শুধব না, বেচে দিয়ে আন্দুলের উঠোনঘেরা দু’কামরায় চলে যাব হয়ত। দেখি…

– চিন্ময়বাবু… কী দরকার! নাহয় ওই লোনের ক্লোসিং চেকটা আমিই লিখে দিচ্ছি। এই সই করলুম, হাতে নিন দিকি।

– দরকার নেই, রেখে দিন।

– দরকার নেই? রেখে দেব? ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় আপনি আমাদের চিফ গেস্ট হলে ভাল হতো… তাও চলবে না?

– বেড়ে খেলেছেন। তবে মিস হয়ে গেল! চুক্ চুক্…

– এহেঃ, সঙ্গে সপরিবারে ইউরোপ ট্যুরটা বলিনি না? কী ভুলোমন যে হয়েছে, সরি!

– যেমনি ভুল করে পরের পর সংস্করণে লেখকের নামটা দিতে ভুল হয়ে যায়, তাই না?

– সে তো স্পেশাল বিজনেস স্ট্র্যাটেজি মশাই! তবে পাঠকরা কী বেস্টসেলার লেখকের নাম জানতে বাকি রেখেছে নাকি? অ্যাই দেখুন, দফতর থেকে হাজারখানেক চিঠি আপনার আসল নামে!

– বেশ ঘোড়েল লোক তো আপনি! অ্যাদ্দিন চেপে রেখেছিলেন!

– মা স্বরস্বতীর কাছে কান ধরতুম দু’বচ্ছর ধরে, এভরি নাইট, বিফোর বেড।

– এগুলো সব আমার পাঠকদের চিঠি?

– সব নয়। আগেরগুলো দফতর থেকে আনালে, আরও হাজারদুয়েক হবে বই কী, তাছাড়া মেল রয়েছে কয়েক’শো।

– এতদিন লজ্জা করেনি আপনার, আমাকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করতে?

– কী বলছেন মশাই, ফি বছর আপনি যে রয়্যালটি পান, সেটা আমাদের হাউসে হাইয়েস্ট!

– টাকাটাই সব নয় মুন্সীবাবু।

– আহা সব তো নিশ্চয় নয়, রেগুলার গেস্ট ইন সরকারী অনুষ্ঠানস্… ইত্যাদির জন্যে সুপারিশ যায় জানেন নিশ্চয় আপনি?

– আর পাঠাবেন না। সুপারিশ দিয়ে আমার পেট চলে না!

– ফ্যান লাভ দিয়ে চলবে ভাবছেন নাকি মশাই? তাহলে ফেসবুক করলেই পারেন!

– করব বৈকি। তবে ওই চিঠিগুলোর থেকে যেটা পাওয়া যায় তার নাম রসদ আর সঙ্গে লেখার খিদে। সেটা আপনি অফার করতে পারবেন না।

– রক্ষে করুন, খিদে আর রসদ একসাথে পাওয়ার কাব্যিটা মাথায় ঢুকছে না, চিন্ময়বাবু!

– ক্যাশ আর কাইন্ডসের গদি ছেড়ে বের না হলে ঢুকবেও না।

– তা’লে পাণ্ডুলিপি?

– একমিনিট… এই যে, রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে রাখলাম। ফেসবুক থেকে কপি করে নেবেন, কেমন!

~~~♠~~~

© সপ্তর্ষি_বোস