পাঠকের চোখে – বটকৃষ্ণবাবুর বুলেট

Anirban & Arijit, Book Review, Reviews, বাংলা

উপন্যাস ~ #বটকৃষ্ণবাবুর_বুলেট
লেখিকা ~ Debarati Mukhopadhyay
প্রকাশ ~ মায়াকানন বার্ষিকী ২০১৮

দেবারতির লেখা “বটকৃষ্ণবাবুর বুলেট” পড়লাম মায়াকানন বার্ষিকীতে। বন্ধুর কৃপায় এই সুদূর বিদেশে বসেও পূজাবার্ষিকীর গল্পগুলো বেশ ভালোই উপভোগ করছি। চারটে মোটাসোটা পূজাবার্ষিকী অনির্বাণ আনিয়ে নিয়েছে একজন দাদাকে দিয়ে। সেগুলো ঘাঁটতে গিয়েই পেয়ে গেলাম আমার প্রিয় লেখিকা দেবারতির এই উপন্যাস। এর আগে “নরক সংকেত” আর “ঈশ্বর যখন বন্দী” পড়ে মুগ্ধ হয়ে ওঁকে মেসেজও করেছিলাম। “অঘোরে ঘুমিয়ে শিব” আর “দিওতিমা” পড়ার খুবই ইচ্ছে থাকলেও এখনও সুযোগ পাইনি এখানে আনাবার। তাই “বটকৃষ্ণবাবুর বুলেট” সেই শূন্যস্থান কিছুটা হলেও পূরণ করতে পারল।

বটকৃষ্ণবাবু সাড়ে চার ফুট চেহারার কালো কুলো রোগাভোগা মানুষ। কৃপণ আর বদমেজাজি হিসেবেও হৃদয়পুরে যথেষ্ট নামডাক আছে ওঁর। কিন্তু শখের বশে তিনি ১৯৬০ সালের একখানা ভিনটেজ রয়্যাল এনফিল্ড বুলেট কিনে ফেলেছেন জলের দরে, মাত্র পঁয়ষট্টি হাজার টাকায়। প্রকাণ্ড সেই বাইকের কাছে বটকৃষ্ণবাবুর রোগাপাতলা চেহারা দেখে নেতাজী কলোনির লোকেরা মুখ টিপে হাসলেও ওঁর সামনে বলার সাহস কারও নেই। কারণ ওই তিরিক্ষি মেজাজ। একটা মেকানিক ডেকে পরেরদিন সেই বুলেটের সার্ভিসিং করিয়ে নিয়ে বটকৃষ্ণবাবু ঠিক করলেন তাতে চড়ে একটু উড়ে বেরাবেন। ভটভট শব্দ করে সেই বুলেট চলতে তো শুরু করল ঠিকই, কিন্তু সেই সাথেই আসল গল্পও আরম্ভ হল তখন। বাইক চালাতে ভালোই জানতেন তিনি, কিন্তু তাঁর সাথেই এমন কিছু ঘটনা ঘটে গেল সেই বুলেট নিয়ে, যা ছিল কল্পনার বাইরে। রহস্যজনক সেইসব ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটে যাওয়ার পর বটকৃষ্ণবাবু আর পাড়ার ছেলে রিন্টু মিলে দ্বারস্থ হলেন মিঃ কুন্দন আগরওয়ালের, যিনি হলেন একজন বাইক স্পেশালিস্ট, প্রচুর অ্যান্টিক দুচাকা আছে ওনার কালেকশনে। কুন্দনজীর কথায় বুলেটটার সম্বন্ধে কিছু আশ্চর্য কথা জানা গেলেও রহস্যের কিনারা করতে ওদের দুজনকেই পাড়ি দিতে হল সুদূর রাজস্থানে, যেখানে অপেক্ষা করে ছিল আরও এক বিস্ময়।

সব মিলিয়ে “বটকৃষ্ণবাবুর বুলেট” গল্পটা মন্দ লাগেনি, তবে লেখিকার থেকে ভালো গল্প আর উপন্যাস পাওয়ার প্রত্যাশাটা এতটাই বেড়ে গেছে যে, এই উপন্যাসটা মোটামুটি লাগল। কিশোরদের হয়তো ভালো লাগতে পারে। দেবারতির কলমে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছোঁয়াও পাওয়া যায়, যা এক পরম প্রাপ্তি পাঠক হিসেবে। একটা সত্য বা কথিত ঘটনার ওপর আশ্রয় করে যে এই গল্পের রহস্য সমাধান হবে, তা বুঝতে পারিনি স্বীকার করছি। কিন্তু সেই সমাধানসূত্র নিজের চোখে একবার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল বলে ব্যক্তিগতভাবে বেশ ভালো লাগল। তবে ওই যে বললাম, প্লট নিয়ে আরও বেশি খেলতে পারতেন দেবারতি, অন্তত ওঁর যতগুলো লেখা পড়েছি আজ পর্যন্ত, তাতে উনি রহস্যের স্মার্ট সমাধান পরিবেশন করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। এই উপন্যাসে মনে হল একটা প্রচলিত অতিপ্রাকৃত ঘটনা আর তাকে জুড়ে কিছু নিদর্শনকে ভিত্তি করেই প্লট বানাতে চেয়েছেন লেখিকা, যেটা লেখার গুণে পড়তে বেশ ভালো লাগলেও উপভোগ্য মনে হল না।

লেখিকা হিসেবে পাঠকের কাছে নিজের একটা আকাশছোঁয়া প্রত্যাশা তৈরি করার জন্য দেবারতি দিনরাত নিজের কাজ সামলেও কতটা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, তার কিছুটা আমরা টের পাই। তাই, আমার স্থির বিশ্বাস আগামী দিনে আমরা আরও জমজমাট উপন্যাস পেতে চলেছি লেখিকার ঝুলি থেকে। অনেক শুভেচ্ছা রইল।

মায়াকানন বার্ষিকীর স্টক শুনলাম সব শেষ। যারা পড়েননি এখনও, তারা কিভাবে সংগ্রহ করবেন, সেটা মায়াকানন-এর প্রকাশক হয়তো বলতে পারবেন।

~~~♠~~~

© অরিজিৎ গাঙ্গুলি