পাঠকের চোখে – দেবী

Book Review, Reviews

#পাঠকের_চোখে
উপন্যাস ~ ♦#দেবী♦
লেখক ~ #হুমায়ূন_আহমেদ

“Close your eyes and try to see.”

মিসির আলি হলেন এমন “একজন মানুষ, যাঁর কাছে প্রকৃতির নিয়ম শৃঙ্খলা বড় কথা। রহস্যময়তার অস্পষ্ট জগৎ যিনি স্বীকার করেন না। যুক্তি আর আবেগ যাঁর হাত ধরাধরি করে হাঁটে।”

“মিসির আলির কথা” শিরোনামে হুমায়ূন স্যার স্মৃতিচারণ করেছেন নর্থ ডেকোটার ফার্গো শহরে থাকাকালীন এক রাতে গাড়ি করে মন্টানা যাওয়ার সময়ের কথা। ওঁর স্ত্রী চালাচ্ছেন গাড়ি। উনি পিছনের সিটে বড় মেয়েকে নিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে আছেন। ভেতর ভেতর একটু ভয়ও পাচ্ছেন অ্যাক্সিডেন্ট হলে কী হবে সেই কথা ভেবে। রেডিওতে কান্ট্রি মিউজিক বাজছে। হঠাৎ একটা গানের কলি শুনে উনি চমকে উঠলেন।

“Close your eyes and try to see.”

লেখকের কথায় মিসির আলির চরিত্রের ধারনা হয়তো সেই রাতেই তিনি পেয়ে গেছিলেন। আর “দেবী” সেই বিখ্যাত সিরিজেরই প্রথম উপন্যাস।

রানুর বয়স ষোলো-সতেরো। আনিস সাহেবের বয়সের প্রায় অর্ধেকেরও কম। মালিবাগের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে পুরনো ঢাকায় এই নতুন বাড়িতে এসে রানুর বেশ ভালোই লাগছে। জায়গাটাও নিরিবিলি। মাত্র ছশো টাকা ভাড়ায় তিন রুমের এত বড় জায়গা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। স্বামী আনিস কাজের জন্য বেরিয়ে গেলে সারাদিন রানু একাই থাকে মোটামুটি। খুব একটা লোকের সাথে মিশতে ওর ভালো লাগে না।

তবে ইদানিং রানুর সাথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে রাতের বেলায়। আনিসকে ডেকে শোনালেও উনি বিশ্বাস করেননি। তবে তা যে মনের ভুল নয়, সেই ব্যাপারে রানু নিশ্চিত।

বাড়িওয়ালার দুই মেয়ের মধ্যে নীলুর চেয়ে বিলুকেই বেশি ভালো দেখতে। কিন্তু প্রথম সাক্ষাতেই নীলু অকপটে রানুকে বলে বসে, “তোমার চেহারায় একটা মূর্তি মূর্তি ভাব আছে।” রানুর রূপের কদর এর আগেও হয়েছে, কিন্তু এইভাবে তো আগে কেউ বলেনি!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিকাল সাইকিয়াট্রির টিচার মিসির আলির আবার প্যারাসাইকোলজি নিয়ে একটা আলাদারকমের কৌতুহল আছে। অনেকেই ওঁকে ওঝা ভাবলেও মিসিরের কাছে কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা। আপনভোলা মানুষটার বিভিন্ন ম্যানারিজম অসাধারণ দক্ষতায় এঁকেছেন লেখক। উপন্যাস অল্প এগোতেই মিসির আলি, রানু, নীলু, আনিস সবাই জড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যের সমাধানের আশায়। শেষ পাতা অবধি পাঠককে টেনে রাখার জন্য লেখককে প্রণাম!

মিসির আলির আবির্ভাবের উপন্যাস হিসেবে এটি জনপ্রিয় হলেও রহস্যের উদঘাটনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন রয়েই গেল। দুর্দান্ত লেগেছে পড়তে। প্রত্যেক চ্যাপ্টারের শেষেই কিছু প্রশ্নের উত্তর বাকি রয়ে গেছে, যার জন্য পড়ার গতিও বাড়তে বাধ্য। হুমায়ূন আহমেদের লেখার প্রতিক্রিয়া জানানোর মত সাহস আমার নেই। যত পড়ছি, তত জানছি এই প্রতিভাবান মানুষটিকে, আর বিস্মিত হচ্ছি বারবার।

বলা বাহুল্য সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত জয়া এহসান অভিনীত “দেবী” সিনেমাটা আগে দেখে তারপর উপন্যাস পড়লাম। সাধারণত প্রথম যার সাথে পরিচয় হয়, সেটাই বেশি ভালো লাগে। “দেবী” সিনেমা তো খুবই ভালো লাগল। এই সময়কার হরর জঁরাতে এমন গা ছমছমে বাংলা সিনেমা দেখিনি বললেই চলে। তিন রাত ঘুমোতে পারিনি ভালো করে, খালি মনে হচ্ছিল খাটের পাশে কেউ দাঁড়িয়ে আছে! মিসির আলির ভূমিকায় চঞ্চল চৌধুরির অসামান্য অভিনয় বেশ নজর কাড়ল। জয়াকে নিয়ে আর কিছু না বলাই ভালো। এইসময়ে বাংলার সেরা অভিনেত্রী বললেও ভুল বলা হবে না হয়তো। সিনেমার প্রয়োজনে উপন্যাসের কিছু জায়গা পরিবর্তন করা হয়েছে খুব স্মার্টলি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার উপন্যাসটি পড়তে আরও বেশি ভালো লাগল!

সব মিলিয়ে “দেবী” আমার মনে অনেকদিন বিরাজ করবেন এইটুকু বুঝতে পারছি। উপন্যাস হোক বা সিনেমা, যেকোনও একটার সাথে অবিলম্বে সান্নিধ্যলাভের চেষ্টা করুন যদি এখনও না হয়ে থাকে। আমাকে ধন্যবাদ পরে জানালেও চলবে।

?

✍ অরিজিৎ গাঙ্গুলি