আহা রে / Ahaa Re – When dream transcends destiny

বাংলা

বাংলা ভাষায় বিশেষ কিছু শব্দসমষ্টি দিয়ে আমরা এমন কিছু মনের ভাব নিখুঁতভাবে প্রকাশ করি যা অন্য ভাষায় এইভাবে কতটা করা যায় জানা নেই । যেমন – ‘আহা রে’ ! এই ‘আহা রে’ র উচ্চারণে মিশে থাকে এক অদ্ভুত ভালবাসার টান । আবার এই ‘আহা রে’ র মাঝের ব্যবধান মিটে গেলে সেটার অর্থ হয়ে যায় আবার সম্পূর্ণ ভিন্ন – ‘আহারে’ , খাদ্যরসিক বাঙালির আরেক ভালবাসার উপাখ্যান ! তাই শুরুতেই সিনেমার এমন নামকরণ এর জন্য পরিচালক রঞ্জন ঘোষের প্রশংসা না করে পারছি না ।

“আহা রে” সিনেমাটি এমন একটা বিষয়ের ওপর তৈরী যেটা নিয়ে ভারতীয় সিনেমায় ইতিমধ্যে বেশ কিছু সাড়া জাগানো কাজ হয়ে গেছে , যেমন – Lunchbox, Once Again , Aamis (এটা একদমই অন্য লেভেল এর) ইত্যাদি । ‘রান্না’ কে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে বাংলাতেও বেশকিছু ভাল কাজ হয়েছে, যেমন –
অরিন্দম শীলের “স্বাদে আহ্লাদে”, প্রতিম গুপ্তর “মাছের ঝোল” প্রভৃতি , তাই এই রেসিপিতে একটু অন্যরকম কিছু না পেলে ঠিক জমত না ! এবার প্রশ্ন উঠবে – তাহলে “আহারে” কি জমে ক্ষীর ? উত্তর খুঁজতে একটু গভীরে প্রবেশ করা যাক ।

প্যারিসে ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে শাহিদা ভীষণ উৎসাহী কিন্তু রাজার প্ল্যান ছিল ঢাকা শহরে একটা রেস্টুরেন্ট খুলবে । রাজা একসময় শাহিদাকে ভালবেসে ক্যারিয়ারের কিছু সুযোগ হাতছাড়া করেছিল বটে তবে শাহিদা পরিষ্কার জানিয়ে দেয় তার এই স্বপ্ন হচ্ছে আলো বাকি সব ছায়া । রাজা বোঝে ভালবাসার কাছে অনুরোধ করা যায় জোর নয়, তাই পাখিকে উড়তে দেয় ।

বুকে জমানো দুঃখ নিয়ে কলকাতায় পুরোনো বন্ধুর রেস্তোরাঁয় সাময়িকী শেফ হিসেবে জয়েন করে । ব্যাঙ্ক লোনের একটা হিল্লে হলে ঢাকায় নিজের রেস্তোরাঁ খুলবে স্বপ্ন দেখে । তবে কলকাতায় এসে ঘটনাক্রমে “ইয়ং বেঙ্গল ক্যাটারিং সার্ভিস” এর Owner বসুন্ধরার সাথে পরিচয় হওয়ার পর রাজার স্বপ্নেরা বাঁক নিয়ে অন্য পথে হাঁটতে শুরু করে । রাজার নতুন স্বপ্নের সাথে সাথে চিত্রনাট্যও বাঁক নিতে শুরু করে । একটা বেশ ভাল টুইস্ট দর্শকদের চমকে দেয়, গল্পে আসে মেজর কনফ্লিক্ট ! সেই কনফ্লিক্ট রাজা ও বসুন্ধরার সাথে গল্পকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে সেটা জানতে হলে দেখতে হবে “আহা রে” !

ভীষণ out of the box নয় “আহা রে” র গল্প কিন্তু চিত্রনাট্য এবং সংলাপ একটা সহজ গল্পের মধ্যে একটা আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছে । আর সব চাইতে বেশী নজর কেড়েছে গল্পের চরিত্রদের মাঝের রসায়ন ! নিমোক্ত সম্পর্কগুলো মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে উপরিউক্ত বক্তব্যের সাথে আশা করি সিনেমাপ্রেমীরা সহমত পোষণ করবেন –

★ রাজা এবং বসুন্ধরার ভাই বাপ্পার সম্পর্ক

★ রাজা এবং বাপ্পার বাবার সম্পর্ক

★ রাজা এবং তার বন্ধু কমলজিৎ এর সম্পর্ক

★ রাজা এবং বসুন্ধরার সম্পর্ক

প্রত্যেকটা সম্পর্ক ভীষণ জীবন্ত, সহজাত, যেন আমরা স্ক্রিনের ওপারে থাকলে এভাবেই কথা বলতাম বা রিয়াক্ট করতাম ।

ছোট ছোট কমিক টাইমিং গুলো বেশ উপভোগ্য, বিশেষ করে রাজার বন্ধু কমলজিৎ এর চরিত্রের বেশ কিছু সংলাপ । বেশ কিছু খাওয়ার রেসিপির ব্যাপারে বেশকিছু ইন্টারেস্টিং তথ্য জানতে পারা যায়, যেমন – চিংড়ির মালাইকাড়ি’র মালাই মানে দুধের মালাই নয় ! সাবপ্লটের মাধ্যমে দুটো সমস্যার দিকে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে ।

এবার আসি টেকনিকাল দিকে । একদম প্রথম দৃশ্য থেকে একদম শেষ দৃশ্য পর্যন্ত সিনেমাটোগ্রাফির আলাদা করে প্রশংসা করতেই হয় । হবে নাই বা কেন, সিনেমাটোগ্রাফির দায়িত্বে ছিলেন Hari Nair যিনি ঋতুপর্ণ ঘোষের জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সিনেমা “দহন”, Ram Gopal Varma বিখ্যাত সিনেমা “Shool” এবং আরো অন্যান্য সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার !

রবিরঞ্জন মৈত্রের এডিটিং ও বেশ নজরকাড়া । যেভাবে কিছু ম্যাচ কাট ব্যবহার করেছেন, পরের দৃশ্যের সংলাপ যেভাবে আগের দৃশ্যের শেষের দিকেই বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে ব্যবহার করেছেন মনে থেকে যাবে ।
ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এবং গানের ব্যবহার ও বেশ একটা ভাল আমেজ তৈরী করে ।

অভিনয়ের প্রসঙ্গে প্রথমেই যার কথা বলব তিনি হলেন বাংলাদেশী অভিনেতা আরিফিন শুভ । রাজার চরিত্র ভীষণ সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । আগামীতে আরো প্রজেক্টে ওনার কাজ দেখার জন্য মুখিয়ে থাকব ।

বসুন্ধরার চরিত্রের বেদনা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বেশ ভাল ভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্সের দিকে ।

সম্প্রতি পরান বন্দ্যোপাধ্যায় কাজ খুব একটা ভাল লাগছিল না ( বিশেষ করে “পূর্ব পশ্চিম দক্ষিণ উত্তর আসবেই” সিনেমাতে ) তবে “আহা রে” তে কী অভিনয় করেছেন, আহা !

এত ভাল সবকিছুর মধ্যে যদি দুর্বল দিকের কথা জিজ্ঞেস করা হয় তবে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে একদম শেষের দিকটা অন্যভাবে ভাবা যেত পারত । যারা সিনেমাটা দেখেছেন তারা আশাকরি বুঝতে পারবেন আমি কেন এমন বললাম । তবে এন্ড প্রোডাক্ট হিসেবে বলব সাম্রতিক বাংলা সিনেমায় Breath of fresh air !

“আহা রে” দেখার পর বুঝেছি রঞ্জন ঘোষ মহাশয় যেভাবে গল্প বলেন তার মধ্যে একটা নিজস্বতা থাকে, একটা যত্ন থাকে, বুদ্ধিদীপ্ত কিছু থাকে । আশাকরি ওনার বাকি দুটো সিনেমাতেও ( “হৃদমাঝারে” এবং “রঙ বেরঙের কড়ি”) এমন কিছু পাবো ।

অবশেষে বলব, ভাল অভিনীত, ভালভাবে বলা গল্প, মন ভাল করা সিনেমা যদি দেখতে চান তাহলে ” আহা রে” সিনেমাটা দেখে নিন নাহলে পরে হয়ত বলতে হতে পারে – আহা রে এতদিন পরে কেন “আহা রে” দেখলাম !?

NOTE : [ Below info collected from Newssense.in ]

♦ In April, this year, international magazine Asian Movie Pulse had included ‘Ahaa Re’ in the coveted list of 25 all-time Great Asian Films on Food, along with Ang Lee’s ‘Eat Drink Man Woman’ and Juzo Itani’s ‘Tampopo’.

♦ Last year “Ahaa Re” had its Asia Premiere at the Singapore South Asian International Film Festival, and was screened at the International Film festivals of Dhaka and Kunming. It had its Australian Premiere at the Indian Film Festival of Melbourne. It further screened at the Indian Film Festival of Rome. In India, it was screened with repeat shows at the Habitat Film Festival, Delhi, Guwahati International Film Festival, Jagran Film Festival (Indian Competition) in Mumbai, Global Cinema Festival (inaugural film) organized by the Film Federation of India in Siliguri, and also in Bengaluru and Hyderabad.

♦ Director Ranjan Ghosh was conferred with the ‘Best Director 2019’ award for the film by the Satyajit Ray Film Society Bengaluru, with Sandip Ray doing the honors, while Rituparna won the Best Actress award at the Indo Bangla Film Awards in Dhaka for the film.

©কৌশিক_দাস